Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা সন্দেহে মৃত আরেক ব্যক্তির স্থান তালতলা কবরস্থানে

করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আজ আরও একজনকে দাফন করা করা হয়েছে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে। ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে আরও এক ব্যক্তির মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে করোনার লক্ষণ ছিল। আজ দুপুরে তালতলায় এই ব্যক্তিকে দাফন করা হয়।

খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের স্টাফ মো. ফেরদৌস দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দাফনের সময় মৃত ব্যক্তির সন্তান উপস্থিত ছিলেন। দাফনকাজে কবরস্থানের চারজন গোরখোদক অংশ নেন।

মৃতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির বয়স ৫৫ বছর। তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। পেশায় রিকশাচালক। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মৃত ব্যক্তির ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবার আগে থেকে শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার সমস্যা ছিল। গত পরশু রাতে তাঁর বাবার শরীরটা বেশি খারাপ হলে তাঁরা নবাবগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর বাবাকে ভর্তি নিতে চায়নি। পরে চিকিৎসকেরা তাঁর বাবাকে দেখে উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর বাবাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে রাত একটার দিকে তাঁর বাবা মারা যান। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের মৃত্যুর প্রমাণপত্রে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এই উপসর্গের কারণে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় তিনি মারা যান।
আজ বেলা একটার দিকে তালতলা কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এই সময়ে কবরস্থানে প্রবেশ করে দুটি অ্যাম্বুলেন্স। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামেন ছয়জন। এই ছয়জন মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুল হাসপাতালের পক্ষ থেকে এসেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরা ছিলেন। কবরস্থানের চারজন স্টাফ দাফনে অংশ নেন। তাঁরা প্রত্যেকেই পিপিই পরা ছিল।

পিপিই পরিহিত দাফনকারীরা। খিলগাঁও, ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

কবরস্থানের ঝিলপাড়ের শেষ প্রান্তে আগে থেকে একটি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। সেটির সামনে এসে অ্যাম্বুলেন্সগুলো থামে। দাফনকারীরা প্রথমে একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে লাশ নামান। পরে কাঠের বাক্সে রাখা মৃতদেহটি কবরে নামান। দাফন শেষ হলে অ্যাম্বুলেন্স দুটি, স্ট্রেচার ও দাফনকারীদের জীবাণুনাশক দিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়। এরপর দাফনকারীরা পিপিই খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। এরপর প্রত্যেককে আবার জীবাণুনাশক দিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়।

দাফন শেষে কবরস্থানে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

মৃতদেহ কবরস্থান পর্যন্ত পরিবহন ও দাফনের কাজ তদারকির জন্য আল-মারকাজুল হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী রোকন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ দাফন হওয়া ব্যক্তির জানাজা কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালেই সম্পন্ন করা হয়েছে। তালতলা কবরস্থানে তাঁকে এনে একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া শেষে দাফন করা হয়। এই কবরস্থানের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ও করোনায় সন্দেহজনক মৃত তিনটি দাফনই আমরা সম্পন্ন করেছি।’

দাফনকারীদের শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে জীবাণুনাশক। খিলগাঁও, ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

মৃত ব্যক্তির ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আব্বার কয়েক দিন ধরে শ্বাসকষ্ট ছিল। আমাদের পরিবারের কেউ বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে আসেনি। আমার আব্বা রিকশা চালাতেন নবাবগঞ্জে। তবে তাঁর করোনা ছিল না। আমরা বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে চেয়েছিলাম। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকেরা বলেছেন, এখানেই দাফন করতে। আব্বাকে করোনা সন্দেহজনক হিসেবে তালতলা কবরস্থানে দাফন করেছে।’

খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে এক ব্যক্তিকে দাফন শেষে পিপিইসহ ব্যবহৃত অন্য জিনিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। খিলগাঁও, ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

মৃত ব্যক্তির ছেলে প্রথম আলোকে আরও জানান, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে তাঁর বাবার কফ, রক্তের নমুনা নিয়েছে। পাশাপাশি তিনিও আক্রান্ত কি না, সেটি জানতে তাঁরও কফ, রক্তের নমুনা নিয়েছে। তাঁকে আলাদা থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কবরস্থানে দাফনকাজে নিয়োজিত আল-মারকাজুল ইসলামীর অ্যাম্বুলেন্স। খিলগাঁও, ঢাকা, ৩১ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার

এর আগে ২৯ মার্চ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তালতলা কবরস্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত সন্দেহে এক নারীকে দাফন করা হয়েছিল। এই কবরস্থানেই প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির দাফন করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাত ৯টার দিকে।