Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা হাসপাতালের সামনে পশুহাট!

ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: প্রথম আলো

পুরান ঢাকার নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে চলছে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা। এখন এই হাসপাতালের সামনের রাস্তায় কোরবানির অস্থায়ী পশুহাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এতে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এই হাসপাতাল সংলগ্ন আরমানিটোলা মাঠ। এই পশুহাট মাঠ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁরা পশুহাটের দরপত্র স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং করোনা প্রতিরোধে এই পশুহাট বাতিলের আবেদন জানিয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাঠটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নিজস্ব সম্পত্তি।

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৪ জুন আরমানিটোলা মাঠের আশপাশের খালি জায়গায় কোরবানির (সরকারি মূল্য ১ কোটি ৬৫ লাখ) পশুহাটের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএসসিসি। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধির কিছুই বলা হয়নি। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। ২৯ জুন দরপত্র চূড়ান্ত হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করা হবে।

কোরবানির হাটের ইজারা তদারকি করে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ। এ ব্যাপারে সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রথম আলোকে বলেন, আরমানিটোলা মাঠে নয়, পশুহাট বসবে মাঠসংলগ্ন আশপাশে খালি জায়গায়। গত মঙ্গলবার ওই এলাকা ঘুরে গলিরাস্তা ছাড়া খালি জায়গা দেখা যায়নি। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি রাস্তার ওপর পশুর হাট বসে, পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। এতে মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

করোনা হাসপাতালের সামনে পশুহাট: ১৫০ শয্যার ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ডিএসসিসির একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ এপ্রিল এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের পাশের মিটফোর্ডে স্থানান্তর করা হয়। এখন এই হাসপাতালে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দিয়েছে ডিএসসিসি। তবে এখন হাসপাতালটির সামনের রাস্তায় পশুহাট বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সংলগ্ন আরমানিটোলা মাঠ। ছবি: প্রথম আলো

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, এমনিতেই হাসপাতালের সামনের রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। এখন হাট বসলে পুরো হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, গত বছর এই হাসপাতালের আশপাশের রাস্তায় কোরবানির পশুহাট বসেছিল। তখন অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এবারের করোনা পরিস্থিতি ভিন্ন। কোনোক্রমেই হাসপাতালে এলাকায় পশুহাট বসানো যাবে না।

মাঠে হাট বসার আশঙ্কা: আরমানিটোলা মাঠের আয়তন প্রায় ৮৯ শতক। ২০১৪ সালের আগপর্যন্ত এই মাঠে পশুহাট বসে। এতে নষ্ট হয়ে যায় মাঠের পরিবেশ। পরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মাঠটি সংস্কার করেন আরমানিটোলা সমাজকল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে এই মাঠে ফের পশুহাট বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসসিসি। পরে ওই বছরের ১১ জুলাই ‘আরমানিটোলা মাঠ: এই মাঠে কেন পশুর হাট?’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়। তখন মাঠের দরপত্র বাতিল করে সংস্থাটি। কিন্তু এবার তারা আবার মাঠে হাট বসানোর পাঁয়তারা করছে। তাই গত ১৪ জুন মাঠে হাট বন্ধে মেয়র বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ জুন পৃথক চিঠি দিয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল।

এ ব্যাপারে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, এই মাঠ বা রাস্তায় পশুহাট বসলে পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এখন করোনা প্রতিরোধে এই এলাকায় পশুর হাট বসানোর কোনো যুক্তি নেই।

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, তাঁরা হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাদের পরামর্শ নেবেন। তারপর হাটের দরপত্র চূড়ান্ত করা হবে। দরপত্র প্রকাশের আগে কেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেননি, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।