Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কার্ডে লেখা আজ দ্বিতীয় ডোজ, বলছে কাল আসতে’

ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নিতে মানুষের ভিড়

‘অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি টিকা নিতে। কার্ডে লেখা দ্বিতীয় ডোজ আজ। কার্ড দেখে চলে এসেছি। এখন বলছে কাল আবার আসতে। অফিস কি আমাকে প্রতিদিন ছুটি দেবে?’ বলছিলেন দিতি চৌধুরী। ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসেছেন তিনি।

দিতির টিকা কার্ড দেখে জানা গেল, তিনি প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন গত ৯ আগস্ট। হিসাব অনুযায়ী কার্ডে তাঁর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ লেখা হয়েছে ৭ সেপ্টেম্বর।

দীর্ঘদিন বিরতির পর গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল গত ৭ আগস্ট, চলে ১২ তারিখ পর্যন্ত। হিসাব অনুযায়ী কার্ডে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ লেখা হয়েছিল। সেই হিসাবে ৭ আগস্ট যাঁরা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। আর ৯ আগস্ট প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ লেখা ছিল ৭ সেপ্টেম্বর (অর্থাৎ, আজ মঙ্গলবার)।

কিন্তু গতকাল সোমবার রাতে হঠাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ফেসবুক লাইভে জানান, আজ থেকে শুরু হচ্ছে গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ প্রদান। এ ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমী পথ অবলম্বন করা হয়েছে। যাঁরা ৭ ও ৮ আগস্ট প্রথম ডোজ নিয়েছেন, আজ শুধু তাঁরাই টিকা নেবেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নিতে মানুষের ভিড়

আবার টিকা কার্ড অনুযায়ী, আজ দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা ছিল ৯ আগস্ট প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের। এখানেই বেধেছে বিপত্তি। দিতি চৌধুরীর মতো অনেকে টিকাকেন্দ্রে এসে ফেরত যাচ্ছেন। তাঁরা গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হঠাৎ পরিবর্তিত ঘোষণাটি জানতেন না।

ঠিক একইভাবে নির্ধারিত সময়ে (কার্ড অনুযায়ী) দ্বিতীয় ডোজ শুরু না হওয়ায় গত দুদিনে ফেরত গিয়েছিলেন অনেকে। কারণ, ৭ ও ৮ আগস্ট প্রথম ডোজ নেওয়া ওই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ছিল ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর। যদিও অবশেষে তাঁরা আজ পাচ্ছেন টিকা।

মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নিতে এসেছেন মো. এনায়েত হোসেন। ৭ আগস্ট প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৫ তারিখ এসে ঘুরে গেছি। কাল রাতে লোকমারফত জানতে পারলাম, আজ আমাদের টিকা দেবে।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৫৫ বছর বয়সী মো. এনায়েত হোসেনকে একটি লাইনের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে এসেছি। তখন বাইরে নারী ও পুরুষদের আলাদা দুটি লাইন ছিল। মেইন গেট (প্রধান ফটক) খুলে দেওয়ার পর সবাই হুড়োহুড়ি করে ভেতরে ঢুকে গেছে। বয়স্ক মানুষ। আমি তো আর ধাক্কাধাক্কি করতে পারি না।’

গণটিকা কার্যক্রমের প্রথম দিনে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ ভিড় দেখা যায়। পুরুষদের তিনটি লাইন ও নারীদের দুটি লাইন করা হয়েছে। সেই লাইন থেকে পুলিশ সদস্যরা ভবনের ভেতর কয়েকজন করে ঢুকতে দিচ্ছিলেন। কিন্তু ছোট ফটক হয়ে ভেতরে ঢোকার সময় লাইন ভেঙে ঢুকছিলেন অনেকে।

ভিড়ের কারণে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা লোকজনকে। উত্তর সিটি করপোরেশনে নয়টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহমেদ। মোহাম্মদপুরের ওই কেন্দ্রও তাঁর অধীনে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম ডোজের সময় প্রতিদিন প্রতিটি কেন্দ্রে প্রায় ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ এক দিনই ৭০০ জনকে দিতে হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে টিকা দিতে সমর্থ হবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, সম্ভব না হলে তাঁরা কালও দিতে পারবেন বা পরশু, অথবা তার পরের দিন। কিন্তু অগ্রিম কেউ দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন না।

কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কার্ডের হিসাব অনুযায়ী যাঁরা আজ টিকা নিতে আসছেন, তাঁদের টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। কাজেই তাঁদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল (৮ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় ডোজ নেবেন ৯ ও ১০ আগস্টের টিকাগ্রহীতারা এবং ৯ সেপ্টেম্বর টিকা নেবেন ১১ ও ১২ আগস্টের টিকাগ্রহীতারা। এই তিন দিন কেউ টিকা নিতে না পারলে তাঁদের জন্য অতিরিক্ত এক দিন রাখা হয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর।