Thank you for trying Sticky AMP!!

কেউ দিতে চায় ফ্ল্যাট, কেউ দিতে চায় সর্বস্ব

শিশু

দেশে-বিদেশে অনেক বছর চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে আর বাচ্চা হওয়ার সুযোগ নেই। টেস্টটিউব শিশুরও চেষ্টা করেছি। তাতেও সফল হইনি। মাতৃত্বের স্বাদ পেতে গহীনের মা হতে চাই—শিশুটিকে দত্তক নিতে আদালতে এভাবেই নিজের যুক্তি তুলে ধরেন ধানমন্ডির এক নারী।

গহীনকে কোন পরিবার পাবে, তা মীমাংসার জন্য ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ আদালতে (পারিবারিক আদালত) গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের মতো শুনানি হয়। এই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সাফিয়া শারমীন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শৌচাগার থেকে গত ১৪ মে দুই দিন বয়সী এক নবজাতককে (মেয়ে) উদ্ধার করা হয়। অভিভাবক খুঁজে না পাওয়ায় শিশুটি এখন সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে আছে। তারাই শিশুটির নাম রেখেছে গহীন। মামলার মীমাংসা হওয়া পর্যন্ত শিশুটি এখানে থাকবে।

আদালতে যুক্তি তুলে ধরা ধানমন্ডির ওই নারীর বিয়ে হয়েছে ২১ বছর। তাঁর স্বামী বড় ব্যবসায়ী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গহীনের প্রতি প্রচণ্ড মায়া পড়ে গেছে। মোবাইলে ওর ছবি দেখতে দেখতে ঘুমাই। ওকে ছাড়া এখন নিজের জীবন কল্পনা করতে কষ্ট হয়। যদিও জানি না গহীনকে পাব কি না। পেলে সবকিছু ওর পেছনে খরচ করতে চাই।’

শিশুটিকে দত্তক নিতে পারিবারিক আদালতে আট পরিবার আবেদন করেছে। এদের মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার রয়েছেন।

গতকাল শুনানির সময় তিনটি পরিবার উপস্থিত ছিল। প্রত্যেক দম্পতি পৃথকভাবে শিশুটিকে কেন দত্তক নিতে চান, তা বর্ণনা করেন। আইনজীবীরা আদালতে এর সপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করেন। বিচারকও আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান, গহীনকে নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মনোভাব জানতে নানা প্রশ্ন করেন।

নাখালপাড়ার এক দম্পতি আদালতে বলেন, শিশুটির জন্য তাঁদের দুটি ফ্ল্যাটের একটি ফ্ল্যাট লিখে দেবেন। বিচারক তখন জানতে চান, এটা করার জন্য এখন তাঁরা প্রস্তুত কি না। উত্তরে এই দম্পতি বলেন, তাঁরা করবেন। নিঃসন্তান এই দম্পতির বিয়ে হয়েছে ১০ বছর। ‘যদি কখনো এই শিশুর প্রকৃত পিতা-মাতা শিশুটিকে নিতে চান। তখন কী করবেন?’ বিচারকের এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, গহীন প্রাপ্তবয়স্ক হলে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। একই ধরনের কথা বলেন অন্য দুই দম্পতি।

নাখালপাড়ার ওই দম্পতি আদালতের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভবিষ্যতে তাঁদের সন্তান হলেও গহীন হবে তাঁদের প্রথম সন্তান।

তবে শ্যামলীর এক দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তবু তাঁরা গহীনকে সন্তান হিসেবে পেতে আগ্রহী।

শুনানি শেষে বিচারক জানান, ২৫ জুলাই রায় দেওয়া হবে।