Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাদে-বারান্দায় পানির জারে সবজি চাষ

পানিতে সবজি চাষের এই পদ্ধতির নাম হাইড্রোপনিক্স

ছাদে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের অবকাঠামোতে একসঙ্গে অনেক গাছ বেড়ে উঠছে। গাছগুলো বড় হচ্ছে পানিতে। এতে মাটির কোনো কারবারই নেই। ছাদের অল্প জায়গা, রান্নাঘর বা কেউ চাইলে অফিসের ডেস্কেও পানিতে এভাবে গাছ লাগাতে পারেন। এতে ঘর সাজানোর কাজ চলবে, একইভাবে কাজের অবসরে গাছ থেকে ছিঁড়ে কেউ একটু পুদিনাপাতা মুখে দিয়ে চিবাতেও পারেন। মাটি ছাড়া পানিতে সবজি চাষের এ আধুনিক পদ্ধতির নাম হাইড্রোপনিক্স।

বেসরকারিভাবে গ্রিন সেভারস নামের একটি সামাজিক উদ্যোগ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অফিস ভবনের ছাদে গত বছর থেকে জল চাষের মধ্যে আধুনিক এ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। এ সামাজিক উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনিসহ অন্যরা হাতে–কলমে কাজ করছেন।

সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে গ্রিন সেভারসের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছাদের একটি অংশে নেট শেড বা সবুজ ছাউনি দিয়ে এ পদ্ধতিতে বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি ফলানো হচ্ছে। শুধু ছাদ নয়, অফিসের ডেস্কেও এলইডি বাতির সাহায্যে পাতা জাতীয় বিভিন্ন গাছ বা সবজি ফলানো হচ্ছে। আহসান রনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে সেই গাছ থেকে একটু পুদিনাপাতা স্বাদের বেসিল খেয়েও দেখালেন।

আহসান রনির সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল এ পদ্ধতির চাষাবাদের নানা সম্ভাবনার দিক। তিনি বলেন, এ পদ্ধতি নগর কৃষিতে বড় সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে নানা গবেষণা হচ্ছে। গ্রিন সেভারসের মাধ্যমে কয়েকটি হোটেল লেটুসসহ বিভিন্ন পাতা জাতীয় সবজির চাহিদা মেটাতে এ পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি ফার্মও এগিয়ে এসেছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটি পর্যায়ে চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

নতুন এ পদ্ধতির উদ্যোক্তারা জানালেন, কম জায়গা ও কম সময়ে অধিক ফলন ফলানো সম্ভব। শহুরে জীবনে গাছ লাগানোর জন্য ভালো মাটি পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট লেগেই থাকে। শহুরে ছাদবাগান জনপ্রিয় হলেও মশা উৎপাদন, মাটিতে ছাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে গাছ লাগাতে মাটি লাগছে না। গাছে মাটিবাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।

নগরে সবজি চাষের এই নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন আহসান রনি

ছাদবাগানে এক দিনে যে পরিমাণ পানি লাগে তা দিয়ে নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে প্রায় দুই মাসের পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়। প্রতিবছর মাটি পাল্টানো, টব নষ্ট হয়ে যাওয়া, নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করা, পানি দেওয়ার ঝামেলাগুলোও পোহাতে হয় না নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে। সব মিলিয়ে এটি একটি সাশ্রয়ী ও টেকসই পদ্ধতি। লেটুস, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, টমেটো, তরমুজ, শসা, বেগুন, কাঁচা মরিচ, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মটরশুঁটি, বরবটি ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করা যায়। যেকোনো মৌসুমেই ফসল ফলানো যায়।

হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো বসানোতে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হয় বলে জানালেন আহসান রনি। বলেন, এরপর গাছের চারা এবং পানিতে মেশানোর জন্য পুষ্টি উপাদান নিউট্রিয়েন্ট বাবদ কিছু খরচ করতে হয়। নিউট্রিয়েন্ট বাবদ ৮০০ টাকায় প্রায় ৫ থেকে ৬ মাসের পুষ্টি চাদিহা পূরণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এ খাতে মাসে খরচ ১০০ টাকারও কম। পানি চলমান রাখার জন্য ৯ থেকে ১৮ ওয়াটের মোটর ব্যবহার করতে হয়। এ মোটর গাছের চাহিদা অনুযায়ী থেমে থেমে চলে, এতে মাসে বিদ্যুৎ বিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো আসে। সাধারণ পদ্ধতিতে মরিচ বা অন্যান্য ফলন পেতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগলেও আধুনিক এ পদ্ধতিতে এক মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া সম্ভব হয়।

কম জায়গা ও কম সময়ে অধিক ফলন ফলানো সম্ভব এ পদ্ধতির চাষে

২০০৯-২০১০ সালে আহসান রনি গ্রিন সেভারসের মাধ্যমে ছাদবাগান নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। অশোকা ফেলো আহসান জানালেন, তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিসের আরবান ফরেস্ট্রি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানকার অভিজ্ঞতায় গত বছর ফার্মটেক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথভাবে হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেন।

আহসান জানালেন, চলতি বছরে নগর কৃষকদের অনেকেই নতুন পদ্ধতিটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গ্রিন সেভারস থেকে অবকাঠামো বসানো থেকে শুরু করে নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ, গাছের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে পরবর্তী পরিচর্যাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।

আহসান রনি জানালেন, পুষ্টি উপাদান নিউট্রিয়েন্ট, গাছ লাগানোর বিভিন্ন অবকাঠামো দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। সরকার যদি এ বিষয়ে উদ্যোগী ও সদয় হয় তবে নতুন পদ্ধতি নিয়ে বহুদূর যাওয়া সম্ভব হবে। গ্রিন সেভারস দীর্ঘদিন ধরে ক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গাছ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সবুজ প্রজন্ম নিজেরাই উদ্বুদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলবে বলে আহসান রনির বিশ্বাস।