Thank you for trying Sticky AMP!!

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রূপান্তরিত মশায় বিজ্ঞানীদের নজর

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা আছে। কিন্তু এ রোগ প্রতিরোধে কোনো টিকা নেই। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার সর্বজনগ্রাহ্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও কারও জানা নেই। বিজ্ঞানীরা তাই এডিস মশার রূপান্তর ঘটিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের সমাধান খুঁজছেন। রূপান্তরিত মশা এডিসের বংশবিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। মশা রূপান্তরের এই আলোচনা ও কাজ বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।

কীটতত্ত্ববিদ ও রোগতত্ত্ববিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এডিস মশা থাকলে ডেঙ্গু থাকবে। এডিস মশা একেবারে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব কাজ। এই ক্ষুদ্র কীট যদি ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করতে না পারে, তাহলে ডেঙ্গু অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে বাংলাদেশে রূপান্তরিত মশা অন্য প্রাণিজগতে কী প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছুই জানা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্ত্রী মশাকে বন্ধ্যা করলে সে আর ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে পারবে না। সাভারে এই গবেষণা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্যরা সেই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছেন। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, এডিসকে ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত করতে পারলে সে আর ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হবে না।

এ বছর দেশে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার নতুন ১ হাজার ৪৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের রোগী ছিল যথাক্রমে ৬৮৯ ও ৭৫৭ জন। এ নিয়ে এ বছর মোট ৬১ হাজার ৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বন্ধ্যা মশা

সরকারের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করে প্রকৃতি ছেড়ে দিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার প্রকল্প নিয়েছে। ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক’ (এসআইটি) নামের এই পদ্ধতি পরীক্ষাগারে সফল হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এসটিআই পদ্ধতিতে গামা রশ্মি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করা হবে। সেই বন্ধ্যা পুরুষ মশা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হবে। এসব পুরুষ মশা স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে মিলিত হলে মশার ডিম নিষিক্ত হবে না। অনিষিক্ত ডিম থেকে এডিস মশার বংশবিস্তার হবে না। এডিস মশার বংশবিস্তার না হলে ডেঙ্গুও কমবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের ডেঙ্গুবিষয়ক নিউজ বুলেটিনে বলেছে, পুরুষ এডিস মশা মানুষকে কামড়ায় না, ডেঙ্গুর ভাইরাসও বহন করে না। তাই পুরুষ মশা প্রকৃতিতে অবমুক্ত করলে কোনো ক্ষতি নেই। এই পদ্ধতি ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব কমাতে ভূমিকা রাখবে।

এই পদ্ধতিটি মাঠপর্যায়ে প্রয়োগে পরমাণু শক্তি কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্যরা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত মশা

এডিস মশা যেমন ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া দিয়েও এর সংক্রমণ ঘটানো সম্ভব। ওলবাকিয়া নামের ব্যাকটেরিয়া যদি এডিস মশার শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে মশার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ভাইরাসের বৃদ্ধিও ব্যহত হয়। ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হয়েছে। আইইডিসিআর বলছে, ওয়ার্ল্ড মস্কিউটো প্রোগ্রাম নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের ১২টি দেশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ চলছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) একটি দিশারি প্রকল্পের মাধ্যমে এই পদ্ধতি ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এই পদ্ধতির ব্যাখ্যা করার সময় আইসিডিডিআরবির পরামর্শক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে এডিস মশাকে ওলবাকিয়া দ্বারা সংক্রমিত করা হয়। ওলবাকিয়া সংক্রমিত পুরুষ মশা স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে অপরিস্ফুটনযোগ্য (যা থেকে মশা জন্মাতে পারে না) ডিম তৈরি হয়। অন্যদিকে স্ত্রী মশা ওলবাকিয়া সংক্রমিত হলে তার থেকে জন্ম নেওয়া অন্য মশাও ওলবাকিয়া সংক্রমিত হয়েই জন্মাবে। এভাবে স্বাভাবিক এডিস মশার জায়গা দখল করে নেয় ওলবাকিয়া সংক্রমিত এডিস মশা।

আইইডিসিআর বলছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক বাস্তু সংস্থানের কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেন, এ প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের জন্য খুবই দক্ষ জনবল, ভালো পরীক্ষাগার প্রয়োজন।

এসব বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ছাড়াও মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ব্যবহারের কথাও যেমন শোনা যাচ্ছে, তেমনি শরীরে মাখার নানা ধরনের মলমের কথাও শোনা যাচ্ছে। যেকোনো প্রযুক্তি, ওষুধ বা মলম ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরুর আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মশা বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। এই কীটতত্ত্ববিদ প্রথম আলোকে বলেন, মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তা জোরদার করতে হবে। মশা রূপান্তরের প্রকল্পগুলো শতভাগ সফালতার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।