Thank you for trying Sticky AMP!!

ড্যাপের পরিকল্পনা হয়, বাস্তবায়ন হয় না

বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে এলাকাবাসী। ডেমরা রোডের কাজলা এলাকায়, ৫ জুন

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর–পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় পরিবেশভাবনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া আলোচকেরা এসব কথা বলেন।
আলোচকেরা বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঢাকা। চট্টগ্রামও বেহাল। অথচ শহরের খালসহ অন্য জলপথগুলো দখল ও আবর্জনামুক্ত থাকলে এ সমস্যা এড়ানো যেত।

ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা আওয়াল শফি বলেন, ঢাকা ও দেশের বড় নগরীগুলোর পরিবেশ ভালো নেই। একটু বৃষ্টিতেই জলজট তৈরি হয়। দিনের আলোর তাপে শহর গরম থাকে। ড্যাপের নতুন পরিকল্পনা থেকে কী কী নেওয়া যায়, তা ভাবতে হবে। বিশেষ করে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। আগের মাস্টারপ্ল্যানের কিছুই মানা হয়নি বলে তিনি জানান।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, অন্য সব পরিকল্পনার মতো ড্যাপেরও কিছু দুর্বল ও শক্ত দিক রয়েছে। পরিবেশ বিষয়াদি, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা দর্শন ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখে ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়। সিএস খতিয়ানে যতগুলো খাল ছিল, সব কটিই ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খালের রেকর্ড অসংখ্য রয়েছে। ড্যাপে ঢাকার ৫৬৬ কিলোমিটার জলপথ অগ্রাধিকার পাবে। এটি পুনরুদ্ধার করা হলে শুধু জলাবদ্ধতা সমাধান নয়, জলপথ হিসেবেও কাজে লাগানো যাবে। পরিবেশ রক্ষা করেই নগর গড়ে তুলতে হবে। এ জায়গায় কোনো দ্বিমত নেই। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ চলছে।
ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগংয়ের সাধারণ সম্পাদক ও অধ্যাপক জেরিনা হোসেন বলেন, নগর সাজানোর সময় নাগরিক সমাজের কোনো কথা শোনা হয় না। রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার অধীনে থাকবে—গণপূর্ত নাকি পরিবেশ অধিদপ্তর। ড্যাপে নদীর ঘাট কোথায় হবে, সেটাও কি নগর পরিকল্পনাবিদেরা করে দেবে? এগুলো ঠিক করা দরকার।

রাজউক ও সিটি করপোরেশনের কাজের মধ্যে সমন্বয় নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক জেরিনা হোসেন বলেন, একটার পর একটা পরিকল্পনা হচ্ছে, বাস্তবায়নের কাঠামো বা আইনি পদক্ষেপ নেই। পরিকল্পনা হচ্ছে, অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। কিন্তু ভূমির নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এই জায়গায় রাজউক আসতে পারেনি। তিনি বলেন, রাজউক ও সিটি করপোরেশনে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ নেই। নতুন ড্যাপেও কমিটি করা হয়েছে। কমিটি করে কিছু হবে না।

শহরের পরিবেশ প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, একটা শহরে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা দেখা জরুরি। আগের ড্যাপের কতটুকু কাজ হয়েছে, কী পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে, রাজউক কী কী কাজ করেছে—এগুলো দেখা দরকার। দেখা যায়, পরিকল্পনা হয়, কিন্তু জনসম্পৃক্ততা হয় না।

বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘১৬ বছর ধরে শুনছি, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। কিন্তু করা হয় না। পুরান ঢাকায় আগুন লাগছেই। আগুনের ঘটনা ঘটলেই নানা তোড়জোড় শুরু হয়। অথচ পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম কিন্তু সরানো হয় না।’

রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের পরামর্শক হিশাম উদ্দিন চিশতী বলেন, আর কত দিন ধরে পরিকল্পনা চলবে। এখন দরকার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। আশুলিয়া হাইওয়েতে ৫৬৬ কিলোমিটার নৌপথ করার পরামর্শ দেন তিনি। হিশাম উদ্দিন চিশতী বলেন, ঢাকায় ৩৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। অথচ নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত স্থান বা খেলার মাঠ থাকা দরকার।

ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ বলেন, কথায় কথায় বলা হয়, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। অথচ নগরায়ণ এই শহরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে গেছে। শহরের নদীগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় এই শহরের অবস্থা।
শহর পরিকল্পনায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে উল্লেখ করে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতির দেশে কোনো পরিকল্পনা করতে হলে আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে করতে হবে, এখানে বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিকল্পনা হলে ফলপ্রসূ হবে না। দ্বিধাযুক্ত পরিকল্পনা হলে চলবে না। ড্যাপে পরিবেশের ভাবনাটি মূল ভাবনা হতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে পরিবেশের বিষয়টি মুখ্য হতে হবে; যেহেতু ঢাকাকে জনগণের জন্য বাসযোগ্য করার কথা বলা হচ্ছে।