Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকায় বাঁশের অভিনব খেলাঘরে শিশুদের উল্লাস

বাঁশের দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠছে এক দুরন্ত কিশোর। বাঁশের তৈরি খেলার নানা রকম স্থাপনা তৈরি করেছেন বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সব বয়সের শিশু-কিশোরের জন্য উন্মুক্ত এই খেলাঘর। ছবি: দীপু মালাকার

ছোট মঞ্চ। তাতে একদল শিশু গোল হয়ে মনের আনন্দে ছড়া কাটছে, ‘ফড়িংকে খাব—খেতে দিব না...তালাটাকে ভাঙব—ভাঙতে দেব না...’। মঞ্চের সামনে গোলাকৃতির একচিলতে ফাঁকা জায়গা। তাতে আরেক দল কচিকাঁচা মেতেছে কাবাডি খেলায়। ফাঁকা জায়গার পাশ ঘেঁষে বাঁশের উঁচু দেয়াল। পাহাড়ে চড়ার মতো করে সেটি বেয়ে ওপরে উঠছে ওরা। কেউ কেউ বাঁশের কাঠামোতে বাঁধা রশির জাল বেয়ে নামছে নিচে। আর গ্যালারিতে বসে শিশু–কিশোরদের এসব কসরত প্রাণভরে উপভোগ করছেন আবাসিকের বড়রা। শিশু–কিশোরদের বিনোদনের সংকটের এই যান্ত্রিক নগরে এমন দৃশ্যকাব্যের দেখা মিলল মোহাম্মদপুরে।

মোহাম্মদপুরের বছিলায় ওয়াসিপুর আবাসিক এলাকার একটি ফাঁকা প্লটে শিশু–কিশোরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে খেলার এসব অস্থায়ী স্থাপনা। প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’। তবে শিশুদের কাছে এটি পরিচিত ‘খেলাঘর’ নামে।

‘পাড়া’নামের একটি গবেষণাধর্মী স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এই ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’ নির্মাণের উদ্যোক্তা। ‘লিডো পিস হোম’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর নকশা ও নির্মাণে কাজ করেছে।

বাঁশের এই অভিনব খেলাঘরটিতে রয়েছে ২০ ফুট উঁচু একটি ‘রক ক্লাইম্ব’। বাঁশের খাড়া দেয়ালের সঙ্গে আংটা লাগানো। তা বেয়ে ওপরে উঠছিল দুই কিশোরী আরজু রহমান ও জেসমিন আক্তার। তারা বলল, ‘এখানে প্রতি বিকেলে আসি ক্লাইম্বিংয়ের টানে। টেলিভিশনে পর্দায় দেখতাম অভিযাত্রীরা রশি বেয়ে পাহাড়ে উঠছে। এখানে ক্লাইম্ব করে চূড়ায় ওঠার রোমাঞ্চটা উপভোগ করি।’

রক ক্লাইম্বের পাশেই রয়েছে ১৫ ফুট উঁচু একটি ‘স্পাইডার ওয়েব’। স্থাপনাটা ঘিরে শিশুরা বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে নিত্যদিন। স্থাপনাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে শিশুরা খুব সহজেই ওপর থেকে নিচে, নিচ থেকে ওপরে ওঠানামা করতে পারে। পা ফসকালেও দুর্ঘটনা ঘটার কোনো আশঙ্কা নেই, মাকড়সার জালের মতো দড়ির বিশেষ ধরনের বুননে আটকে থাকবে শরীর।

 ছোট মঞ্চের পাশ ঘেঁষে ১০ ফুট উঁচু ‘র‌্যাম্প স্পেস’ পুরো স্থাপনাটিকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে, যাতে উঠলে পাখির চোখে পুরো খেলাঘরের কার্যক্রম উপভোগ করা যায়। ব্যতিক্রমী নকশার কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবে।

বাঁশের খেলাঘরে দড়ির জাল বেয়ে ওঠানামা করছে শিশুরা। মোহাম্মদপুরের ওয়াসিপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া বাঁশের খেলাঘরে রয়েছে একটি ছোট মঞ্চ। এখানে শিশু–কিশোর থেকে আবাসিকের বাসিন্দারাও খুব সহজেই নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে। মঞ্চের সামনে দর্শকদের জন্য রয়েছে ৮০ থেকে ৯০ আসনের একটি ছোট গ্যালারি। আর বিশেষ ধরনের দুলুনি ‘টায়ার সুইং’ ব্যাম্বু প্লে স্পেসে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

ব্যতিক্রমী নির্মাণসৌকর্য ও সহজলভ্য উপকরণ বাঁশ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করার ফলে এটি দেখতে আশপাশের আবাসিক এলাকার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন ভিড় করে। এমন একজন মোহাম্মদপুরের নুরুল হুদা তাঁর চার সন্তান নিয়ে স্থাপনাটি দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই এক টুকরো জায়গার মধ্যে শিশুরা কাবাডি খেলছে, পাহাড় বেয়ে উঠছে, দুলুনিতে দুলছে—সত্যিই অবিশ্বাস্য। ঢাকা শহরে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। তাই এ রকম শিশুবান্ধব খেলাঘর প্রতিটি আবাসিক এলাকায় সহজেই হতে পারে।’

স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান পাড়া সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী, ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ৯ জন স্থানীয় বাঁশের কারিগর ৮০০ বাঁশ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মাণ করেছেন। চলতি বছরের গত মে মাসে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারপর ৩ মে থেকে থেকেই এটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন লিডো পিস হোমের শিশু–কিশোরেরা এখানে নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। খেলাঘরের এই জায়গা ব্যক্তিগত। মালিকের সঙ্গে দুই বছরের জন্য উদ্যোক্তাদের চুক্তি হয়েছে। ফলে এই বাঁশের খেলাঘর এখানে থাকবে আগামী ২০২১ সালের মে পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের স্থাপনা করতে আগ্রহী হলে তাঁরা সে ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন।

গবেষণাধর্মী স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘পাড়া’র অন্যতম গবেষক জাকারিয়া প্রিন্স ‘ব্যাম্বু প্লে স্পেস’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার থেকে আমরা একটি অংশ্রগ্রহণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপনাটি নির্মাণ করেছি। আমরা মনে করি, এ রকম স্থাপনা সাধারণ শিশু–কিশোর, বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন শিশুদের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে আবাসিকের মানুষের মধ্যে দৃঢ় সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।’