Thank you for trying Sticky AMP!!

তেঁতুলতলা মাঠে থানা চান না এলাকাবাসী

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার দাবিতে কলাবাগানে মাঠের সামনে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। গতকাল বিকেলে।

বিকেল হলেই লামিম ইসলাম (৮) ছুটত এলাকার মাঠে। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন—যখন যা ইচ্ছা হতো, বন্ধুরা মিলে তা–ই খেলত। তবে সপ্তাহখানেক ধরে মাঠে যেতে পারছে না লামিম। মাঠে কাঁটাতারের বেড়া পড়েছে। লামিমরা এখন আর খেলতেও পারে না।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে কনকর্ড টাওয়ারের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে লামিম এসব কথা জানায়। কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের জন্য জায়গাটির চারপাশে সম্প্রতি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় শিশু–কিশোর ও এলাকাবাসী অংশ নেন।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকার খোলা একটি জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি সেখানে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন হয়। স্থানীয় লোকজন জায়গাটি মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন।

ঢাকা জেলা প্রশাসন ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট এক নোটিশে জানায়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই নোটিশে এই জমিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে মাঠ হিসেবেই রাখতে প্রতিবাদ করে আসছিলেন।

মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না বলেন, মাঠটি রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয়েও চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এলাকার সাংসদ আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু এখন শিশুদের যাতায়াতই বন্ধ হয়ে গেল। সেখানে গেলে বাচ্চাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মাঠ রক্ষা করতে হবে।

রাজধানীতে একের পর এক মাঠ দখল হচ্ছে। কিন্তু এই তেঁতুলতলা মাঠ দখলের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর প্রতিবাদকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা মনীষা চক্রবর্তী। মানববন্ধনে তিনি বলেন, উন্নয়ন মানে শুধু অট্টালিকা ও সেতু বানানো নয়। শিশুদের বিকাশের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখাও উন্নয়ন। পতিত জমির অধিকার শুধু সরকারেরই নয়, এতে এলাকাবাসীরও অধিকার আছে।

কামরুজ্জামান খালেকের বয়স ৬৫ বছর। ছোটবেলায় তেঁতুলতলা মাঠে নিজের খেলার স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, এখন বয়স্ক স্থানীয় যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রায় সবারই এই মাঠের স্মৃতি আছে। এমনিতেই চারদিকে একের পর এক ভবন হচ্ছে। একটু স্বস্তির জায়গা নেই। এই মাঠও যদি নিয়ে নেয়, তাহলে এখনকার বাচ্চারা কোথায় যাবে।

আরেক অভিভাবক ইশরাত শিউলী বলেন, শিশুরা এখন প্রচণ্ড পরিমাণে মোবাইলে আসক্ত। তাদের দোষও দেওয়া যায় না। চারদেয়ালের বাইরে কোথায় যাবে। যে মাঠগুলো আছে, তা যদি একে একে দখল হয়ে যায়, তাহলে এই প্রজন্মের সঠিক বিকাশ হবে না।

মানববন্ধনে বলা হয়, মাঠ ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতে থাকবে। মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ও শিশুরা তেঁতুলতলা মাঠের সামনে গিয়েও প্রতিবাদ জানায়।