Thank you for trying Sticky AMP!!

দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক

সারা দেশে প্রতিমা ভাঙচুর, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা–অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজার দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সেদিন সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোতে কালো কাপড় পরে প্রতিবাদ করবেন তাঁরা।

আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক গণ–অনশন থেকে এ কর্মসূচি বর্জনের ডাক দেওয়া হয়।

শাহবাগে সকাল থেকে সারা দেশে প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে গণ-অনশন, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বান এবং আয়োজনে সারা দেশে গণ-অনশন, গণ-অবস্থান হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর স্বামীবাগ থেকে একটি মিছিলে ভোর ছয়টার দিকে শাহবাগে আসে। সেখানেই এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এটি শেষ হয় বেলা পৌনে একটার দিকে।

কর্মসূচির শেষের দিকে অবস্থান থেকে দাবি তুলে ধরেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। তিনি বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দির, পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হবে। ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজার দীপাবলি উৎসব বর্জনের ডাক দেন তিনি।

অবস্থান কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। এ হামলার বিচারের দাবিতে গণ–অনশনের মূল দাবি হলো এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার থাকা সত্ত্বেও এর আগে রামু, নাসিরনগর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। এসব হামলার প্রতিকারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। তিনি বলেন, সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। পরিকল্পিত না হলে পরপর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের হামলা হতে পারে না।’

সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রাষ্ট্রের জন্য সামনে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘এ শক্তির বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে। দেশের অপমৃত্যু আমরা দেখতে চাই না।’

প্রশাসন নীরব কেন?

সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার জানান, পূজাকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হলো এর দায় রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকার এড়াতে পারে না। প্রশাসন এত নীরব কেন? দেশে অশান্তি করার জন্য অপশক্তি এসব করছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায়, সেখানে এমন ঘটনা কেন? সরকার শুধু জিরো টলারেন্সের কথা মুখে বলে, এটা মুখে বললেই হবে না।

দেশের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, দেশকে আফগানিস্তান বানানোর অসৎ উদ্দেশ্য চলছে। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সময় এসেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলিম ঐক্য পরিষদ গঠনের।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী জানান, প্রতিবছর এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। কিন্তু এসব ঘটনা ঠেকাতে পূর্বপ্রস্তুতি দেখা যায় না। এসব হামলার দায় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে দায় নিতে হবে‌‌, সতর্ক থাকতে হবে।

দেশ রাজনৈতিক আস্থাহীনতায় আছে মন্তব্য করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা জানান, সব মানুষের, সব ধর্ম–সম্প্রদায়ের অধিকারের রাজনীতিটাকে ফিরিয়ে আনার মধ্যে দিয়েই আস্থা অর্জন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার মধ্যে দিয়েই আস্থা অর্জিত হবে।

গণফোরাম নেতা মোস্তফা মোহসীন জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাই বসবাস করছে। কিন্তু কিছু ষড়যন্ত্রকারী এটা সব সময় নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেছে। অতীতের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি জিয়াউল হাসান বলেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার না করতে, গালিগালাজ বা কটাক্ষ না করতে। স্বাধীনতাসংগ্রামে সব ধর্মের মানুষ মিলে এ দেশ স্বাধীন করেছিল। একসঙ্গে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে তারা। এ সম্প্রীতি এখন নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

‘সরষের মধ্যেই ভূত আছে’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, যেখানে মেরুদণ্ডহীন একটা বিরোধী দল আছে, এককভাবে তারা সংসদ চালায়, প্রশাসন চালায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে এমন ঘটনা ঘটল কী করে?’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশের বদনাম হলো। আমরা সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। একটিও সাম্প্রদায়িক হামলার এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়নি। সরষের মধ্যেই ভূত আছে। প্রশাসনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা কাজ করে।’

আজকের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সাংসদ মমতাজ বেগম, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির প্রমুখ।