Thank you for trying Sticky AMP!!

দৃষ্টিহীন খোকনের চাওয়া, সচল থাকুক হাত

বাসে নিজের হাতে ভাজা বাদাম বিক্রি করছেন খায়রুল ইসলাম। ফার্মগেট, ঢাকা, ১৬ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর ফার্মগেটে গিয়ে এক আমড়া বিক্রেতাকে ‘খোকন ভাই’য়ের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনের শুভর চায়ের দোকানে খোঁজ নিতে বললেন। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এক লোক শুভর দোকানে চা খাচ্ছেন। পাঞ্জাবি পরা, একহাতে সাদা ছড়ি, অন্য হাতে ভাজা বাদামভর্তি ব্যাগ। এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী লোকটিই খায়রুল ইসলাম খোকন। ফার্মগেট এলাকার অনেকের কাছে তিনি ‘খোকন ভাই’ হিসেবে পরিচিত।

খোকন ফার্মগেটের খামারবাড়ি এলাকায় বাসে বাদাম বিক্রি করেন কারও সাহায্য ছাড়াই। গতকাল মঙ্গলবার ফার্মগেট এলাকায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে। আড়াই বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনী উপজেলায়। ভাগ্য ফেরাতে প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হকার হবেন। বললেন, ‘কারও কাছে হাত পাতা পছন্দ করি না। ভিক্ষাকে নিকৃষ্ট কাজ মনে হয়।’

খোকন প্রথমে মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় হকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। অনেক কিছু বেচতেন। পরে দেখলেন, বাদামের বিক্রি বেশি। শুরু করলেন বাদাম বিক্রি।

ফার্মগেট রুটের যাত্রীদের কাছে এখন বেশ পরিচিত ‘খোকন ভাই’। অনেকেই বাসে বসে খোকনের বাদামের অপেক্ষায় থাকেন। খোকন বললেন, বাসচালক ও সহকারীরা অনেক সময় হকারদের বাসে উঠতে দিতে চান না। কিন্তু তাঁকে কেউ আটকান না। ওই এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারাও বললেন, খোকন ভালো মানুষ। কখনো কারও কাছে হাত পাততে দেখেননি।

ফার্মগেট এলাকার বাদাম বিক্রেতা খায়রুল ইসলাম। ফার্মগেট, ঢাকা, ১৬ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম

ঢাকায় আসার পাঁচ-ছয় বছর পর বিয়ে করেন। মোহাম্মদপুরের পুলপাড় বটতলা এলাকার একটি ঘরে সংসার পাতেন। তখন থেকে সেখানেই আছেন। এখন তাঁর এক ছেলে, দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১৪ বছর, নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেটি সবার ছোট। সংসারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় খোকনকে। কিন্তু ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নে উত্তর দেন, ‘আল্লাহ ভালো রাখছেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারও কাছে হাত পাততে হয় না—তাতেই শুকরিয়া।’ শুধু নিজের সংসার নয়, গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ মার কাছেও টাকা পাঠান খোকন। খোকনের স্ত্রীও পরিবারে আর্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করেন।

তবে অন্য হকারদের মতো খোকন বেশি ছোটাছুটি করতে পারেন না। তাঁকে চলতে হয় ছড়ি দিয়ে পথ মেপে মেপে। খোকন বলেন, ‘ঠিকমতো বেচতে পারলে বাড়তি কিছু টাকা না থাকলেও আয় এবং সংসারের খরচ সমান সমান হয়। ব্যবসা খারাপ হলে ঋণ করতে হয়।’ আরও বললেন, বাদাম বিক্রি করতে গিয়ে তিনবার সড়ক দুর্ঘটনা শিকার হয়েছেন। খোকনের সামনের দাঁতগুলো নেই। হিউম্যান হলারের ধাক্কায় সড়কে ছিটকে পড়ে এই অবস্থা হয়।

খোকনের চাওয়া-পাওয়ার বৃত্তটা ছোটই। বললেন, ‘আল্লাহর কাছে আমি প্রতিদিন যা চাই, তা-ই আপনাকে বলি। আল্লাহ যেন আমাকে মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত কর্মক্ষম রাখেন।’ আরও বললেন, ‘জীবনে সুখ সবাই চায়। আমিও চাই। আমি চাই একটি ছোট দোকান করতে। সেই দোকান করতে করতে কম করে হলেও দুই থেকে তিন লাখ টাকা লাগবে। আমি এত টাকা কই পাব?’ খোকন স্বপ্ন দেখেন, পড়ালেখা শেষ করে মেয়েটি নার্স হবে।