Thank you for trying Sticky AMP!!

নিলামের মালামাল গভীর রাতে লুট

নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হতে না পেরে স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুসারীরা মালামাল চুরি করেছেন বলে অভিযোগ।

  • পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ির মৌলভিবাজার কমিউনিটি সেন্টারে চুরির ঘটনা ঘটে।

  • ভবনের দরজা, জানালা, লোহার গ্রিল, থাই গ্লাস ও শৌচাগারের মালামাল খুলে নেওয়া হয়।

তিনতলা ভবনের সব দরজা, জানালা, লোহার গ্রিল, থাই গ্লাসসহ প্রয়োজনীয় মালামাল খুলে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার কমিউনিটি সেন্টারে

নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার আগে মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি কমিউনিটি সেন্টারে। চুরির অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ সিটিরই এক কাউন্সিলরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, কাউন্সিলরের অনুসারীরা নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা না হতে পেরে মালামাল লুট করেছেন।

কমিউনিটি সেন্টারটি পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়িতে অবস্থিত। নাম মৌলভিবাজার কমিউনিটি সেন্টার। এই স্থাপনাটি দক্ষিণ সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। কমিউনিটি সেন্টারের তিনতলা ভবনটি প্রায় ১০ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। কমিউনিটি সেন্টারের জায়গায় বহুতল ভবন করতে দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাটি নিলামে তোলে।

নিলাম ঢাকা হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। দাম ধরা হয় প্রায় ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ৮ এপ্রিল ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সূত্র জানায়, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হয় রাইডা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁরা কর বাদে প্রায় ৭ লাখ ৭৮ হাজার দাম হাঁকায়। প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান ছিল।

রাইডা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে নিলামে অংশ নিয়েছিলেন মূলত দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল ওরফে মানিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১২ এপ্রিল রাতে মৌলভিবাজার কমিউনিটি সেন্টারে লোক পাঠিয়ে তিনি জানতে পারেন, ভবনের সব দরজা, জানালা এবং শৌচাগারের কমোড ও বেসিন খুলে নেওয়া হয়েছে। এখন ভবনের কাঠামো বাদে আর কিছুই নেই।

আবদুল আউয়ালের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের অনুসারী ছাড়া ভবনে অন্য কারও হাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাঁরাই মালামাল লুট করেছেন। বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে করপোরেশনকে জানাবেন।

বেচারাম দেউড়িতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, কমিউনিটি সেন্টারের তিনতলা ভবনের দরজা, জানালা, লোহার গ্রিল, থাই গ্লাস ও শৌচাগারের মালামাল নেই। কমিউনিটি সেন্টারের নিচে দুই যুবকের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, কাউন্সিলরের লোকজন সবকিছু খুলে নিয়ে গেছেন বলেই তাঁরা শুনেছেন।

কমিউনিটি সেন্টারটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ সিটির সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চ মাস পর্যন্ত ভবনটির দোতলায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীরের কার্যালয় ছিল। নিলামে তোলার পর সম্প্রতি তিনি ভবনটি ছেড়ে পাশের ভবনে অফিস নিয়েছেন।

নিলামে যিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন, তাঁর নাম যেমন আবদুল আউয়াল, তেমনি দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নামও আবদুল আউয়াল। কাউন্সিলর আবদুল আউয়াল নিলামের বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন। তিনি দাবি করেন, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলমগীর নিলামে তাঁর অনুসারীদের দিয়ে ভবনটির কাজ নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর ওয়ার্ডের কাজ অন্যরা কীভাবে নেয়, এই বিষয়ে হুমকিও দিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে শেখ মোহাম্মদ আলমগীর দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কালোটাকা সাদা করার জন্য কয়েক গুণ বেশি দামে দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। মালামাল চুরির সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে কে কী বলল, তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না।

মালামাল চুরি যাওয়ায় নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান আগের দামে ভবনটি কিনতে চায় না। তারা বলছে, এখন দাম কত আছে, তা যাচাই করতে হবে। আর সরকারি সংস্থার মালামাল চুরির মামলা করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, নিলামে কার্যাদেশ দেওয়ার আগপর্যন্ত মালামালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের। সিটি করপোরেশন কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

অবশ্য ১২ এপ্রিল মালামাল চুরির ঘটনা ঘটার পর ১৬ এপ্রিল, অর্থাৎ গত শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি বিষয়টি জানতই না। ওই দিন দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রথম আলোকে বলেন, এই বিষয়ে কেউ তাঁদের অবহিত করেনি। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলরও কিছু জানাননি। অভিযোগ পেলে তাঁরা খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, মালামাল লুট হয়ে থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।