Thank you for trying Sticky AMP!!

পানি নেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে, দুর্ভোগে রোগীরা

বোতল হাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বাইরে পানি আনতে যাচ্ছেন রোগীর স্বজনেরা।

নারায়ণগঞ্জের ভুলতার বাসিন্দা মোহাম্মদ আসাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কয়েক দিনের চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয় তাঁর। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালের বাথরুমে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ। দেখেন বাথরুমের ট্যাপ দিয়ে পানি আসছে না। ভেবেছিলেন, কিছুক্ষণ পর হয়তো পানি আসবে।

ঘটনাটি মেয়ে পারুল আক্তারকে জানান তিনি। ঘণ্টা খানেক পরও বাথরুমের ট্যাপে পানি না আসায় আশপাশের ওয়ার্ডে খবর নেন পারুল। জানতে পারেন, কোথাও পানি নেই। শুধু মোহাম্মদ আসাদ কিংবা পারুল আক্তার নন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা পানির সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এই ভোগান্তির শুরু। পানি না থাকার বিষয়টি রোগীর স্বজনেরা জানান হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারদের। তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে হাসপাতালের কর্মচারিরা সেখানকার পাম্পে গিয়ে দেখেন, সেখানে পানির বদলে বালু উঠছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন গণপূর্তের প্রকৌশলীদের বিষয়টি জানান। প্রকৌশলীরা সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানান, গভীর নলকূপে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। এর বদলে বালু উঠছে।

এই বিষয়ে গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী জুলফিকার আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেকটা নেমে গেছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আমাদের যে পাম্পটি আছে, ওটার পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এই কারণে পাম্প থেকে পানির বদলে বালু উঠছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন করে গভীর নলকূপ খনন শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ করতে আরও পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগবে।’

বোতলে করে বাইরে থেকে সংগ্রহ করা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও স্বজনদের।

রাত দশটায় সরেজমিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখার সময়ও সেখানে পানি ছিল না। রোগী ও স্বজনেরা জানান, দিনভর পানি ছিল না। অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। খাওয়ার জন্য বাইরে থেকে পানির বোতল কিনে এনেছেন তাঁরা। তবে পানি না থাকায় গোসল করা সম্ভব হয়নি। অনেকে পাশের হাসপাতালে গিয়ে গোসল করেছেন। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি হাসপাতালে দিনভর পানি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগী ও স্বজনেরা।

শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় এনে গত রোববার ৭৫ বছর বয়সী আবেদ আলীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবেদ আলীর মেয়ের স্বামী ইয়াসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে পানি নেই। গোসল করতে পারিনি। বাথরুমগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রোগীসহ আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।’

পানি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি মোহাম্মদ আসাদ।

তবে রোগীদের ভোগান্তি সাময়িকভাবে দূর করতে পাশের জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে পানি আনার সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান গণপূর্তের প্রকৌশলী জুলফিকার আরেফিন। তিনি বলেন, কিডনি ইনস্টিটিউট থেকে পাইপের মাধ্যমে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে সাময়িকভাবে পানি সরবরাহ করা হবে।

এই বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গভীর নলকূপে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাই পাম্প চালু করলেও পানি উঠছে না। গণপূর্তের কর্মকর্তারা সংকট সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

রোগী ও স্বজনেরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সে জন্য ওয়াসা থেকে পানি এনে হাসপাতালের সামনে রাখা হয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পাশের হাসপাতাল থেকে পানির একটা সংযোগ আমাদের হাসপাতালে সাময়িকভাবে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, রাতেই হাসপাতালে পানি চলে আসবে। শুক্রবার সকাল থেকে পানির আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’