Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রকাশ্যে আসছে ‘নবাবের নাতি’র আরও প্রতারণা

নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দেওয়া আলী হাসান আসকারি

নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয়দানকারী সেই প্রতারক আলী হাসান আসকারির বিরুদ্ধে প্রতারণার নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও  মতিঝিল থানায় তিনটি প্রতারণার মামলা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া প্রতারণার মামলার সূত্র ধরে গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসা থেকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আসকারিকে তাঁর চার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। তাঁদের তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ শনিবার আসকারিসহ তাঁর সহযোগীদের রিমান্ডের শেষ দিন।

গ্রেপ্তারের পর আসকারির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আসতে থাকে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আসকারি নিজেকে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দুবাইয়ে তাঁর সোনার কারখানা আছে বলে জানান। তাঁর বাবা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মালিকানা রয়েছে তাঁর। মন্ত্রী, সাংসদসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করতেন তিনি। এরপর ফেসবুকে ঘনিষ্ঠতা গড়ে  তুলে  মাউন্ট এলিজাবেথে বিনা খরচে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে আত্মসাৎ করেছেন কোটি কোটি টাকা।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটিটিসির উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে প্রতারক আসকারি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের অন্যতম মালিক পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাজারখানেক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরি দেওয়া ও বাহরাইনে লোক পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করার কথাও স্বীকার করেন তিনি। পুলিশে এসআইয়ের চাকরির জন্য ছয় লাখ ও মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠানোর কথা বলে সাড়ে তিন লাখ টাকা করে নিয়েছেন। তিন দিনের রিমান্ড শেষে কাল রোববার আসকারি ও তাঁর চার সহযোগীকে আদালতে তোলা হবে।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে প্রতারক আসকারির বিরুদ্ধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও মতিঝিল থানায় তিনটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা আসকারির বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রতিদিনই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারক আসকারি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে সেখানে আসা মন্ত্রী, সাংসদ, শিল্পপতি ও সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলে আসকারি তাঁর ফেসবুকে আপলোড করতেন। ফেসবুকে নানাভাবে বিভিন্ন মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতেন। পরে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা ও চিকিৎসা সনদ দেওয়ার কথা বলে প্রায় লাখখানেক করে টাকা নিতেন। এরপর তিনি গা ঢাকা দিতেন। আসকারি নবাবের নাতি, তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী ও সাংসদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, এই কথা বলে তাঁর সহযোগীরা মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠানো ও এসআইয়ের চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিটিটিসি কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ইউটিউবে বঙ্গ টিভি নামের একটি চ্যানেলে আসকারিকে নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এই ইউটিউবের উপস্থাপক মায়া রাজ নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে সংবাদকর্মী দাবি করে দর্শকদের সামনে ‘ইতিহাসের কিংবদন্তি’ পরিচয়ে একজনকে পরিচয় করিয়ে দেন। মায়া রাজ তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, ‘আমাদের আজকের সেলিব্রেটি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নাতি নবাব আলী হাসান আসকারি। নবাব আসকারি তারুণ্যের অহংকার, বাংলার গর্ব ও আধুনিক ঢাকার রূপকার।’ এমন বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় তাঁকে। এরপর আলী হাসান আসকারি বঙ্গ টিভিতে তাঁর সেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
ওই অনুষ্ঠানে আসকারি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসেছি প্রায় তিন বছর হয়ে গেল।

দেশের মানুষের ভালোবাসায় আমি গর্বিত ও আনন্দিত। এরই প্রেক্ষাপটে আজ আপনাদের সঙ্গে আমার পরিচয়। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ একটা ইতিহাস। তাঁর নিজস্ব জমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছিলেন। পাশাপাশি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে; যার উনি প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিবছর আমরা তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি। এরই ধারাবাহিকতায় মনে হলো আমাদের পরিবারের বাংলাদেশে আসা দরকার। অনেকে বলেন, নবাব সলিমুল্লাহর কাছে দাড়িয়ায় নূর একটা পাথর ছিল। পাথরটা স্বয়ং বুড়িগঙ্গার বুড়ি নবাব সলিমুল্লাহকে উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। একদিন দুপুরে যখন নবাব সাহেব আহসান মঞ্জিলের সামনে বসে ছিলেন, হঠাৎ করেই বুড়ি পাথরটা দেন। যেটাকে বলা হয় দাড়িয়ায় নূর। অনেকে ইতিহাস জানলেও অনেক সত্য তথ্য জানেন না। যে পাথরটা আমার নানাকে বুড়ি দিয়েছিলেন, সেটা এখন আমার হাতে আছে।’ এটা বলার পরপরই নিজের আঙুলে থাকা একটি পাথর দেখান আসকারি। স্যার সলিমুল্লাহ এটা পরতেন বলে জানান। ‘তারপর এটা আমার দাদা মেজর হাসান আসকারির কাছে ছিল। আমি বাংলাদেশে আসার আগপর্যন্ত আংটি আমার মায়ের কাছে ছিল। দেশে আসার সময় এটা মা আমার কাছে দেন।’ বলেন আসকারি।

সিটিটিসির কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আলী হাসান আসকারি নামধারী এই ব্যক্তি মহাপ্রতারক। কোথাও নবাব পরিবারের নাতি আবার কোথাও সমাজের বিত্তশালীদের স্বজন পরিচয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মালিক এই ভুয়া নবাব আলী হাসান আসকারি। সিঙ্গাপুরে তাঁর এক সহযোগীসহ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। কথিত ইউটিউব চ্যানেলের উপস্থাপক মায়া রাজসহ এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন আসকারির সম্পদ খোঁজা হচ্ছে।