Thank you for trying Sticky AMP!!

ফুটপাত পেরিয়ে সড়কে দোকান

বিমানবন্দর স্টেশন থেকে হজ ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার সড়কের দুপাশের ফুটপাতজুড়ে বসেছে দোকানপাট। গত বৃহস্পতিবারের ছবি। প্রথম আলো

আশকোনার বাসা থেকে হেঁটে বিমানবন্দর সড়কে আসতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগার কথা মো. জসিম উদ্দিনের। কিন্তু ফুটপাত ও সড়ক হকারদের দখলে থাকায় এই পথটুকু আসতেই ২০ থেকে ২৫ মিনিট লেগে যায় তাঁর।

জসিম বলেন, রেলক্রসিং আছে। রিকশা ও অন্য যান চলাচল ব্যাহত হয় ট্রেনের কারণে। তাই বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে না উঠে এই পথটুকু তিনি হেঁটেই চলাচল করেন। কিন্তু ফুটপাত ও সড়কে অস্থায়ী দোকানের কারণে স্বস্তিতে হাঁটার সুযোগও নেই। ১০ মিনিটের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই পেরোতে হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানের ভিড়। এই চিত্র পুরো শহরজুড়ে থাকলেও বিমানবন্দর রেলস্টেশন-সংলগ্ন এলাকার ফুটপাতসহ সড়কের চিত্রটা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রেলস্টেশন-সংলগ্ন পার্কিংয়ের জায়গা পুরোটাই ফুটপাতের দখলে। এ ছাড়া হজ ক্যাম্প, আশকোনা, দক্ষিণখানসহ পুরো এলাকার ফুটপাতেই দোকানপাট। রেললাইনের আশপাশেও গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ভাতের হোটেল, ফলসহ নানা রকমের পণ্যের দোকান।

স্থানীয়রা বলেন, দুপুরের পর থেকেই বসতে শুরু করেন দোকানিরা। বিকেল গড়াতেই এলাকার চিত্র পাল্টে যায়। নানান হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। এই বাজারে পোশাকের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই মেলে। তরিতরকারিসহ আছে মাছের দোকানও। সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার কোনো উপায়ই থাকে না পথচারীদের।

রেলস্টেশন-সংলগ্ন ফুটপাতে কয়েক বছর ধরে ফল বিক্রি করেন আবদুর রহিম মিয়া। তিনি জানালেন, ওই এলাকা বিমানবন্দর থানার আওতায় পড়লেও মূলত দক্ষিণখানের রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে চলে ফুটপাতের এসব দোকান। লাইনম্যানরা এসব টাকা নেন। কিন্তু তাঁদের নাম বলতে চান না ব্যবসায়ীরা।

দোকানিরা মাসে মাসে চাঁদা দেন বলে তাঁরা জনসাধারণের আপত্তি খুব একটা কানে তোলেন না বলে অভিযোগ করেন আশকোনার বাসিন্দা ছন্দা আক্তার।

ব্যবসায়ী নূর হোসেন বলেন, তাঁরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার ক্ষমতা নেই। তাই এলাকার নেতাদের মধ্যস্থতাতেই তাঁরা এখানে দোকান চালাচ্ছেন তিন বছর ধরে। জায়গা দখল করে ব্যবসা করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিক। বাজারে দোকান নিতে যে টাকা অগ্রিম দিতে হয়, তা মওকুফ করে দিক, তাহলে আমরা জায়গা ছেড়ে দেব।’

ফুটপাত ও সড়কে এই ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে সম্প্রতি তা তীব্র হয়ে পড়ায় বাসিন্দারা এর থেকে পরিত্রাণ চাইছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হাসান জানান, হজের সময়টাতে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা দেয়। সে সময়টা কিছুটা নির্বিঘ্নে চলাচল করা যায় এই রাস্তা দিয়ে। এ ছাড়া সারা বছর পুলিশের সামনে দিয়েই চলে এ দখলদারিত্ব। কয়েকটি স্কুল-কলেজ আছে এই এলাকায়। প্রতিদিনই চলাচল করে কয়েক শ শিক্ষার্থী। ফুটপাতে দোকান আর রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার রাজত্ব। কয়েক বছরে এই এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো এলাকাজুড়েই তীব্র যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিরক্ত এলাকাবাসীর একটাই দাবি, এলাকায় যারা এসব দখলবাজদের সুযোগ করে দিচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক। বাজার উৎখাত করে বাসিন্দাদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ডিএনসিসি নিয়মিত অবৈধ দোকানপাট ও দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। তারপরও স্থানীয় কিছু টাউট-বাটপারের সহযোগিতায় দোকানিরা আবার বসে যান। উত্তরা, বিমানবন্দর, হজ ক্যাম্প, আশকোনা, কসাইবাড়ি এলাকায় আগামী মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে। সে সময় রাস্তাঘাট, ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে।