Thank you for trying Sticky AMP!!

বর্ষা শুরুর পর জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ ঘোষণা

প্রতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাবেন ১০ লাখ টাকা। বরাদ্দ করা টাকা খরচের কর্মপরিকল্পনা এখনো করা হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন

জলাবদ্ধতা নিরসনে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ১০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার যে ঘোষণা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মপরিকল্পনা করে বর্ষার আগে এই বরাদ্দ দিলে নালাগুলো পরিষ্কার ও সচল করা যেত। এর কিছুটা সুফল পাওয়া যেত। এখন এই টাকা খরচের জন্য হয়তো তড়িঘড়ি করে একটি পরিকল্পনা করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির সর্বোচ্চ ফোরাম বোর্ড সভায় ২০ জনের মতো কাউন্সিলর বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় নাগরিকদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ভরা বর্ষার আগেই এবার রাজধানীর কিছু এলাকায় জলবদ্ধতার কারণে চলতি জুন মাসের ১ ও ৫ তারিখ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কটূক্তি করেছেন, কাউন্সিলরদের বিদ্রূপ করেছেন।

কাউন্সিলরদের এমন বক্তব্যের পর মেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে থোক বরাদ্দ দেওয়ার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেন। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে, তা এখনো ঠিক করেনি করপোরেশন।

যদিও শিগগিরই এই টাকা বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, কোথাও পানি জমলে কাউন্সিলররা যাতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন, সে জন্যই এই বরাদ্দ। এর জন্য কোনো প্রকল্প কিংবা কাজের পরিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের হাতে কিছুই থাকে না। তাঁরা একদম জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। সুতরাং কাউন্সিলরদের হাতে ১০ লাখ টাকা থাকলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে যদি ৫০ হাজার টাকাও খরচ করতে পারেন, তাহলে তাঁদের মুখরক্ষা হয়।

উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। তবে বরাদ্দ করা টাকা সংরক্ষিত ১৮টি নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পাবেন। সে হিসাবে মোট ৭২ জন কাউন্সিলরকে দেওয়া হবে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, এই টাকায় কিছু হবে না। তবে মেয়র আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন সমস্যা সমাধানের। যে এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে সেখানেই বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে কাজ করতে হবে।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের থোক বরাদ্দ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই। জলাবদ্ধতা যেসব এলাকায় হয় সেসব এলাকায় দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩৯ কোটি টাকার কাজ চলছে।

অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ জন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের বেশির ভাগ বলেছেন, বরাদ্দকৃত টাকায় জলাবদ্ধতার মতো বড় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচজন কাউন্সিলর বলেছেন, বৃষ্টি হলেই ওয়ার্ডের বেশির ভাগ জায়গায় চলাচলের মতো পরিবেশ থাকে না। পানি জমে খুব বাজে এবং ভয়ংকর অবস্থা হয়। মানুষের গালমন্দ শুনতে হয়। ফেসবুকে মানুষের নানা বিদ্রূপ লেখালেখি সহ্য করতে হয়।

ডিএনসিসির নতুন যুক্ত হওয়া ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের (দক্ষিণখান) কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বলেন, ‘করপোরেশনে এত ফান্ড, অথচ আমরা পানিতে মরছি। নাগরিক হিসেবে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচার অধিকার তো আমাদের আছে। আমাদের অধিকারটুকু আমাদের দেওয়া হোক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলররা এই অর্থ চাইনি। এ দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’

নতুন আরেকটি ওয়ার্ড ৫৪ নম্বর (তুরাগ) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘১০ লাখ টাকা দিয়ে কাউন্সিলরদের ঠান্ডা করা হয়েছে। কারণ, কাউন্সিলররাই জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে আছে। মানুষ আমাদের বলে, আপনি কিসের কাউন্সিলর?’

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খাল ও বক্স কালভার্টগুলো পরিষ্কারের কাজ করছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে এই কাজের সুফল যে খুব একটা আসেনি, তা চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টিতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। তবে কয়েকটি এলাকায় আগের চেয়ে দ্রুত পানি নেমেছে।

দুই সিটি বলছে, দীর্ঘদিনের জঞ্জাল পাঁচ মাসে সমাধান করা সম্ভব না। নগর বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দুই সিটি করপোরেশন আন্তরিকতা নিয়ে কাজ চালিয়ে গেলে আগামী বর্ষায় এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।

নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, এই টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটা ভালো। তবে ১০ লাখ টাকা এক অর্থে অপর্যাপ্ত। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলরদের নেওয়া পদক্ষেপ যদি সঠিকভাবে তদারকি করা যায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের এই কাজে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে বরাদ্দ করা টাকা কম হলেও কিছুটা সমাধান পাওয়া সম্ভব।