Thank you for trying Sticky AMP!!

বাস্তবায়ন সামান্য, তবু ‘উচ্চাভিলাষী’ বাজেট

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চাভিলাষী বাজেটে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। কারণ, বাজেট দেখে তারা আশা করে এক, বাস্তবতা হয় আরেক।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গত অর্থবছরের মধ্যবর্তী সংশোধিত বাজেট ছিল ৬ হাজার ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার। তবে প্রকৃত খরচ হয় ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন প্রায় সাড়ে ২৯ শতাংশ। এমন বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরেও ৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকার ‘উচ্চাভিলাষী’ বাজেট দিয়েছে সংস্থাটি।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবায়ন করতে না পারলে শুধু লোকদেখানোর জন্য এত বড় বাজেট দেওয়া উচিত নয়। উচ্চাভিলাষী বাজেটে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। কারণ, বাজেট দেখে তারা আশা করে এক, বাস্তবতা হয় আরেক। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বাজেট প্রণয়ন করার পরামর্শ তাঁদের।

বিগত বছরগুলোতে ঢাকার দুই সিটির মেয়র আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট ঘোষণা করা হয়নি। সাধারণত গণমাধ্যমের সামনে আসার আগে করপোরেশনের সর্বোচ্চ ফোরাম, তথা বোর্ড সভায় বাজেট অনুমোদন করা হয়। কাউন্সিলররা বোর্ড সভার সদস্য। গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই সিটি করপোরেশনের বোর্ড সভায় নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করা হয়।

দক্ষিণ সিটির বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় ৪৪টি খাতে গত অর্থবছরে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৬৮৩ কোটি টাকা। স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদসহ আরও ৬টি খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এসব খাতে অবশ্য আদায় হয়েছে ২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ৫০টি খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৭৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে আয় হয় ৬৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও আয়ের বড় উৎস ধরা হয়েছে সরকারি ও বৈদেশিক উৎসকে। আগের বছরের চেয়ে ৬৩ কোটি বাড়িয়ে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিবেচনা করে আমরা স্থানীয় পর্যায় থেকে চাহিদা দিচ্ছি। কিন্তু সরকার জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে।’

অন্যদিকে প্রায় একই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও। গত অর্থবছরে উত্তর সিটির ৪ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছিল। পরে সংশোধিত বাজেট এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৩৩ কোটি ৩২ লাখে। মূল বাজেট থেকে সংশোধিত বাজেট প্রায় ৬২ শতাংশ কম।

এদিকে চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্য খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে; যা মূল বাজেটের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১ হাজার ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে সংস্থার আদায় হয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬১ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকগুলো খাতে স্বাভাবিক প্রত্যাশা থাকে যে আদায় হয়তো বেশি করতে পারব। নানা বাস্তবতায় পরে হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী আদায় হয় না। আবার বাজেট বাস্তবায়নে নানা রকম চ্যালেঞ্জ থাকে। দেখা যায়, দু-একটা জায়গায় হয়তো কভার করা যায় না। তারপরও যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান মনে করেন, নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু প্রচুর চাহিদা আছে, সেই চাহিদাকে একধরনের কাল্পনিক জায়গায় রেখে হয়তো উচ্চাভিলাষী বাজেট অনুমোদন করা হচ্ছে। যদিও টাকার জোগান পরে আর হয় না। এ জন্য গত কয়েক বছরের শিক্ষা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা এবং দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।