Thank you for trying Sticky AMP!!

বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী কম, মাস্ক পরায় অনীহা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে একই পরিবারের সদস্য হলে পাশাপাশি আসনে বসতে দেওয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কারও কারও মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহ চোখে পড়ে। সায়েদাবাদ, ঢাকা, ১ এপ্রিল

দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সরকার গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে। মানতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। এর বিপরীতে বাড়ানো হয়েছে ভাড়া।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার অনেক বাসে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে যাত্রীদের মাস্ক পরা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো ঢিলেঢালা ভাব বজায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ও সন্ধ্যায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোয় পরিবারের সদস্য ছাড়া কাউকে পাশাপাশি আসনে বসতে দেওয়া হয়নি। পরিচিত পরিবহনগুলো নিয়ম মেনে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। তবে কয়েকটি লোকাল বাস নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সিলেট যাওয়ার জন্য আল-মোবারাকা বাসে টিকিট কেটেছেন রিতা। বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আগে একই বাসে ২৫০ টাকায় সায়েদাবাদ থেকে সিলেট যেতাম। আজ ৫০০ টাকা নিল। ভাড়া তো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’ এই সময় কুমিল্লাগামী তিশা এক্সক্লুসিভ বাসেও ১৫০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নিতে দেখা গেছে।

তবে সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পরিচিত বাসগুলোর ভাড়া নিয়ম মেনেই বেড়েছে। সন্ধ্যায় লাকসামের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছিল তিশা ট্রান্সপোর্ট। বাসটিতে যাত্রী ছিল অর্ধেক। আগে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া ছিল। আজ ৩২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

বাসটির চালকের সহকারী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘করোনার কারণে যাত্রী কমে গেছে। ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েও লোকসান গুনতে হচ্ছে। আগে বৃহস্পতিবার অনেক যাত্রী যেত। আজ অনেক কম। আগে দুই সিটে দুইজন গেলে পাইতাম ৪০০ টাকা। এখন দুই সিটে একজনে পাচ্ছি ৩২০ টাকা।’

একই সময় নোয়াখালীর উদ্দেশে সায়েদাবাদ ছেড়ে যায় লাল-সবুজ পরিবহনের একটি এসি বাস। আগে এই বাসে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও আজ ৬৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। একই কোম্পানির নন-এসি বাসে ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫০ টাকা।

ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে হানিফ পরিবহনের নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৪৮০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৭৫০ টাকা হয়েছে। এসি বাসের ভাড়া বিজনেস ক্লাসে ৭০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা করে রাখা হচ্ছে। আর সিলেটগামী নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৪৭০ টাকার পরিবর্তে ৭৫০ টাকা করে রাখছে হানিফ পরিবহন।

চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া রাখা হচ্ছে ৭৫০ টাকা। অন্যদিকে এসি বিজনেস ক্লাসের জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা। আর সিলেটগামী শ্যামলীর নন-এসি বাসের ভাড়া ৪৮০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকায়।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছিলেন সুমন। তিনি বলেন, ‘নন-এসি বাসে ৬০ শতাংশ বাড়ানোর পর জনপ্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৭৬৮ টাকা। আমরা রাখছি ৭৫০ টাকা করে। যাত্রীও অর্ধেক কমেছে। এতে প্রতিবার যাওয়া-আসায় একেকটি বাসে ১৫ হাজার ১২০ টাকা কম আয় হচ্ছে।’

একদিকে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, অন্যদিকে বাড়তি ভাড়া—এই দুই কারণে সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিনেও বাসের যাত্রী তুলনামূলক কম বলে জানান পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। এর আগে বৃহস্পতিবার সাধারণত যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। আজ যাত্রী নেই বললেই চলে।
ঢাকা-সিলেট রুটের লোকাল বাস আল-মোবারাকা। বাসটির চালকের সহকারী রিপন বলেন, ‘ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই যেতে চাইছেন না। যাত্রী এসে আগের মতো ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতে চাইছেন। বেশি চাইলে তাঁরা টিকিট না কেটে ফিরে যাচ্ছেন। আগে এমন হতো না।’

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রী তো নাই। সিটও কমে গেছে। ৬০ শতাংশ বাড়ানোয় ভাড়া এখন জনপ্রতি ৭৫০ টাকা। কিন্তু মানুষ তো বাড়তি ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।’

মাস্ক পরতে চান না অনেকে

সরেজমিন বাসযাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে তীব্র অনীহা দেখা গেছে। সায়েদাবাদে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় ছিল আল-মোবারাকার একটি বাস। যাত্রী মাত্র সাতজন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের মুখেই মাস্ক নেই।
বাসটিতে ছোট্ট সন্তান কোলে বসেছিলেন মিতা। হবিগঞ্জের মাধবপুর যাবেন তিনি। মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ মিতা বলেন, ‘গরমে জান বাঁচে না। তার ওপর বাচ্চা কোলে। গরমে রাস্তায় পড়ে থাকলে কে দেখবে? আপনারা তখন তো আর লিখবেন না।’

নাসিম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘মাস্ক কিনতে মনে নাই।’
একই চিত্র লাকসামগামী তিশা ট্রান্সপোর্টেও। বাসটির যাত্রী রোকসানা বলেন, ‘সারা দিন মাস্ক পরে ছিলাম। এখন মাথাব্যথা করছে। তাই খুলে রেখেছি।’ অথচ রোকসানা নিজে পেশায় একজন চিকিৎসক।

যাত্রীদের বেশির ভাগই মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে প্রচণ্ড গরমের কথা জানালেন।
তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। এই বিষয়ে তিশা এক্সক্লুসিভের চালকের সহকারী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমরা মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলে দিচ্ছি। মানা না মানা যাত্রীদের ওপর।’

হানিফ পরিবহনের কর্মী সুমন বললেন, ‘অভাব-অনটনের দেশে সব কি মানা সম্ভব? মাঝে মাঝে জোর করেও মানানো যায় না।’