Thank you for trying Sticky AMP!!

বিনা পয়সার বাজার

‘বিনা পয়সার বাজার’ থেকে ‘কেনাকাটা’ করছেন একজন। ছবি: সংগৃহীত

‘শসার দাম কত?

–পয়সা লাগবে না
বেগুন?
–বিনা পয়সা
লাউ আর টমেটো?
–ভাই, যা দেখতেছেন সব বিনা পয়সায়।’

অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার ফেসবুকে পেজে বিভিন্ন সবজির ছবি দিয়ে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছিল তাদের ‘বিনা পয়সার বাজার’ আয়োজনের তথ্য। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ অথবা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক সংকটে পড়া মধ্যবিত্তদের জন্য ‘বিনা পয়সার বাজার’ শিরোনামে বিনা মূল্যে সবজি দিচ্ছে ফাউন্ডেশনটি।

ফাউন্ডেশন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন, রাস্তায় বিনা মূল্যে তাঁদের সবজির বাজার দেখে বেশ অবাকই হয়েছেন লোকজন। চাষির খেত থেকে সরাসরি কিনে বিষাক্ত রাসায়নিকবিহীন তাজা সেই সবজি তাঁরা পৌঁছে দিচ্ছেন লোকজনকে। এখানে যে কেউ পছন্দমতো বাজার করতে পারবেন বিনা পয়সায়। একজন সর্বোচ্চ এক কেজি পরিমাণ সবজি নিতে পারেন সেই বাজার থেকে। তাঁদের মতে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে খাদ্যসংকটের যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একে অপরের পাশে থেকে সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদানের অর্থ থেকে ৩২টি জেলায় সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ২০১৬ সাল থেকে সহায়তামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি আহমেদ ইমতিয়াজ জামি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গ্রামের চাষিরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। আবার শহরের অনেক মানুষ সবজি কিনতে পারছেন না। এ অবস্থায় খেত থেকে বা স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে তা আমরা ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে আসছি। মিরপুর ১, মিরপুর ১২, মিরপুর সাড়ে ১১–তে পল্লবী এলাকা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, রায়েরবাজারে দুর্গামন্দির গলিতে ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল তিন দিন ছয়টি স্থানে বাজার বসিয়ে এবং ভ্রাম্যমাণভাবে পিকআপ ভ্যানে করে বিনা মূল্যে লোকজনের কাছে দুই টন সবজি পৌঁছে দিয়েছি আমরা।’
বিনা পয়সার এই বাজার করোনাকালে চলবে।

ঢাকার ছয়টি স্থানে পরিচালিত হচ্ছে ‘বিনা পয়সার বাজার’। ছবি: সংগৃহীত

অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের কাছে লাউ বিক্রি করেছেন কৃষক মোহাম্মদ আলী। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড় সীমান্তের কাছে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার পশ্চিম চিলাই গ্রামে। প্রথম আলোকে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে লাউ করি। এখন পর্যন্ত এক হাজার লাউ বিক্রি করেছি। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ৪০০ লাউ বিক্রি করেছি ফাউন্ডেশনের কাছে। প্রতিটি লাউয়ের দাম ছিল ১০ টাকা। ফাউন্ডেশনের লোকজন খেতে এসে ট্রাকে করে লাউ নিয়ে গেছেন। খেতে আরও নতুন নতুন লাউ হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এখন সবজি বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিক্রি করতে না পারলে সব লাউ পচে যাবে। এ জন্য কম টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাকি ৬০০ লাউ বিক্রি করেছেন স্থানীয় বাজারে।

ফাউন্ডেশনের চাইল্ড স্পনসরশিপ বিভাগের প্রধান এবং কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহে সমন্বয়কারী সাদ বিন সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিনা পয়সার বাজারে সবজির মধ্যে রয়েছে, লাউ, শসা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, জালি কুমড়া ইত্যাদি। খেত থেকে আমরা এক–তৃতীয়াংশ সবজি কিনে নিচ্ছি। আর বাকি সবজি কেনা হচ্ছে সেখানকার স্থানীয় বাজার থেকে। বেশির ভাগ সবজি কেনা হচ্ছে পঞ্চগড় ও রংপুর থেকে।’

তিনি জানান, প্রথম দিন সকাল নয়টায় পল্লবীতে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের সামনে ২০ মণ সবজি রাখা হয় ‘বিনা পয়সার বাজার’–এ। এক ঘণ্টার মধ্যে সব সবজি শেষ হয়ে যায়। তবে তাঁরা যে পরিমাণ সবজি নিয়ে আসেন, তার তুলনায় চাহিদা ২০ গুণ বেশি বলে জানান তিনি।
সাদ বিন সাত্তার বলেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ ফোন কল পাই সহযোগিতা চাওয়ার। সহায়তা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’

ফাউন্ডেশনের সভাপতি আহমেদ ইমতিয়াজ জামি বলেন, ‘ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে নিবন্ধনের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জে নিম্নমধ্যবিত্ত ১ হাজার ২০০ পরিবারে ২৫ কেজির ত্রাণের ব্যাগ আমরা তাঁদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। একেকটি ব্যাগে আট কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, পাঁচ কেজি আলু, এক কেজি লবণ, এক লিটার তেল, এক কেজি পেঁয়াজ, বিস্কুট, নুডলস ও স্যালাইনের প্যাকেট এবং মাস্ক ছিল। আরও ৮০০ পরিবারকে এ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে সহায়তা চেয়ে নিবন্ধনের আবেদন এত বেশি আসছে যে আমরা বাধ্য হয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছি।’

তিনি জানান, প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ লোককে ইফতার করাচ্ছেন তাঁরা। পঞ্চগড় থেকে এক ব্যবসায়ী এক টন চাল অনুদান দিয়েছেন। সেটি আগামী মঙ্গলবার বিতরণ করবেন। পাশাপাশি ‘বিনা পয়সার বাজার’ও চলবে। এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের ‘সক্ষম’ নামে একটি প্রকল্প আছে জাকাতের অর্থ গ্রহণের জন্য। ওই অর্থ দিয়ে তাঁরা কাজ হারানো মানুষদের ঈদের পর জীবিকার ব্যবস্থা করবেন। গত চার বছরে তাঁরা ‘সক্ষম’–এর মাধ্যমে ১০টি জেলার ৪৯২ জনকে মুদি দোকান, খামার, রিকশা, ভ্যানের ব্যবস্থা করে জীবিকার সংস্থান করে দিয়েছেন।