Thank you for trying Sticky AMP!!

বেহাল সড়কে জনদুর্ভোগ

পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে ইট–সুরকি। বৃহস্পতিবার গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে। প্রথম আলো

বুড়িগঙ্গার তীরের আবাসিক এলাকা গেন্ডারিয়া। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এলাকাটা দৃষ্টিনন্দন হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গেন্ডারিয়ার প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় গলি বা রাস্তা খানাখন্দে ভরা। বেড়িবাঁধ সড়কে গড়ে ওঠা ট্রাক-পিকআপের স্ট্যান্ডের কারণে সেখানে যান চলাচল বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরান ঢাকার মধ্যে গেন্ডারিয়ার রাস্তাঘাট সবচেয়ে বেশি ভাঙাচোরা। এর মধ্যে গেন্ডারিয়া নতুন রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সরু গলিগুলোতেও ইট-পাথর উঠে গেছে। বেড়িবাঁধ সড়কের অব্যবস্থাপনার কারণে বিকেলে নদীর পাড়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন না বাসিন্দারা। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪০, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে গেন্ডারিয়ার মধ্যে। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, এলাকাটির আয়তন ১ দশমিক ৮৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ডিএসসিসি বলছে, এই এলাকার প্রধান সড়কগুলো তিন থেকে চার বছর আগে পিচ ঢালাই করা হয়েছিল। এখন সেগুলো নতুন করে সংস্কার করা হবে। আর গলি সড়কগুলো কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া। সেগুলো আরও কয়েক বছর পর সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে।
দয়াগঞ্জ বাজার মোড় থেকে শুরু হয়ে জুরাইন রেলগেটে শেষ হয়েছে গেন্ডারিয়া নতুন রাস্তা। সড়কটি প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থ। এই রাস্তাটির দুপাশে বড় বড় গর্তে ভরা। দ্রুতগতিতে কোনো যানবাহনই চলতে পারছে না। কারণ, গর্ত থেকে এক চাকা বাঁচাতে গেলে আরেক চাকা গর্তে পড়ে যায়। রাস্তাটির দুই-তৃতীয়াংশ খানাখন্দে ভরা।
নতুন রাস্তার একটি ভবনের বাসিন্দা আহমেদ জুবায়ের বলেন, রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকে শ্যামপুর তথা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা যাওয়ার জন্য গেন্ডারিয়া নতুন রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এক বছরের বেশি সময় ধরে এই রাস্তাটিতে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে। গর্তের পরিমাণও তখন বাড়তে থাকে। তখন ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু রাস্তাটি সংস্কারে ডিএসসিসি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা যায়, গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোড, হরিচরণ রায় রোড, সতীশ সরকার রোড, আলমগঞ্জ রোড, অক্ষয় দাস লেন, ডিস্টিলারি রোড, শরাফতগঞ্জ লেন, আজগর আলী লেন, শাঁখারীনগর লেন, ঢালকানগর লেন, জুরাইন কবরস্থান রোড, জয়নাল আবেদিন রোড খানাখন্দে ভরা। এসব লেন ছয় থেকে আট ফুট চওড়া।
দুটি রিকশাই পাশাপাশি চলতে পারে না। এর মধ্যে গলিগুলোতে খানাখন্দ থাকায় যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যেই গতকাল দেখা গেল দীননাথ রোডে সীমান্ত গ্রন্থাগারের সামনে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ছে ডিএসসিসি। সেখানে বড় বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
দীননাথ রোডের বাসিন্দা সুকুমার রায় বলেন, এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ রিকশায় যাতায়াত করেন। কিন্তু গলিগুলো খানাখন্দে ভরা থাকায় রিকশায় ঠিকমতো চলা যায় না। গর্তে রিকশার চাকা পড়লে শরীরে প্রচুর ঝাঁকুনি পড়ে। এতে অল্প দূরত্বে হেঁটেই চলাচল করেন বাসিন্দারা। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত না থাকায় ঠিকমতো হাঁটাচলাও করা যায় না।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি অংশ হিসেবে গেন্ডারিয়া নতুন রাস্তার পাশ দিয়ে নতুন আরেকটি রেললাইন নির্মাণ করবে সরকার। তাদের এই পরিকল্পনার বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে খোঁজখবর নিব। তারপর রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া গেন্ডারিয়ার অন্যান্য এলাকার রাস্তাগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করা হবে।’

বেড়িবাঁধ সড়কে গাড়িই চলে না
সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ থেকে পোস্তগোলা পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কটি গেন্ডারিয়া এলাকার মধ্যে পড়েছে। নদীর পাড়ে এই সড়কটির প্রশস্ততা প্রায় ২০ ফুট। অথচ সড়কটির দুপাশে অর্ধশতাধিক ট্রাক সব সময় পার্কিং করে রাখা হয়।
এতে সড়কটি সরু হয়ে গেছে। যাত্রীবাহী যান সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। এতে সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে আসা লেগুনাগুলো আলমগঞ্জ বরাবর এসেই হরিচরণ রায় রোডে ঢুকছে। এতে সড়কটিতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
আলমগঞ্জ রোডের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধ রোডে লেগুনাগুলো চলতে না পেরে হরিচরণ রায় রোড দিয়ে চলছে। এসব লেগুনা এই এলাকার মানুষের তেমন কোনো কাজে আসে না। যানজট সৃষ্টি করে। অথচ বেড়িবাঁধ সড়ক থেকে ট্রাক-পিকআপগুলো সরিয়ে দিলে এই এলাকার যানজট কমত। মহল্লার মানুষ খুবই উপকৃত হবে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) এক কর্মকর্তা বলেন, পোস্তগোলা সেতু এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কে যান চলাচলের জন্য একটি পরিকল্পনা নিচ্ছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তখন বেড়িবাঁধে গাড়ি পার্কিং করে রাখার সুযোগ থাকবে না। এতে ঢাকা শহরের ওপরও গাড়ির চাপ কমবে।