Thank you for trying Sticky AMP!!

ভিকারুননিসা স্কুলকে সতর্ক, পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

একটি প্রতিষ্ঠানকে স্কুলের পোশাক তৈরির একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পোশাক বানানোর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পোশাক বানানো-সংক্রান্ত এক মামলায় আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে এই আদেশ দেয় প্রতিযোগিতা কমিশন। চেয়ারপারসনসহ পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিযোগিতা কমিশন এই আদেশ দেয়। আজসহ মোট ছয় দিন এই মামলার শুনানি হয়।

একক প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পাসের জন্য ন্যূনতম তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক বানাতে হবে। দরজির দোকান নির্বাচনের জন্য দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে।

প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত এই মামলাটি করে প্রতিযোগিতা কমিশন। অভিযোগ ছিল, ২০০৩ সাল থেকে লালবাগের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ একচেটিয়াভাবে শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরি করত। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা দরজি এই ব্যবসায় আসতে পারত না। বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই পোশাক কিনতে হতো।

মামলার আদেশে বলা হয়, মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ যোগসাজশের মাধ্যমে ভিকারুননিসা স্কুলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এককভাবে পোশাক সরবরাহ করে। এতে স্কুল ও পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ (১) ধারার বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজকে ৭৯ হাজার ৮৯৭ টাকা প্রশাসনিক আর্থিক জরিমানা এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য না থাকা সত্ত্বেও একচ্ছত্রভাবে দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের পোশাক সরবরাহের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলকে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পোশাকের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা রাখা হয়।

আদেশে ভিকারুননিসা স্কুলের উদ্দেশে বলা হয়, একক প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পাসের জন্য ন্যূনতম তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক বানাতে হবে। দরজির দোকান নির্বাচনের জন্য দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। এর আগে স্কুলের পোশাক, রং, নকশা, মনোগ্রাম সম্পর্কে অভিভাবকদের জানাতে হবে। এরপর মনোনীত পোশাক নির্বাচিত তিনটি দরজি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিতে হবে।

আদেশের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সেটি প্রতিবেদন আকারে ২৬ এপ্রিলের মধ্যে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষকে প্রতিযোগিতা কমিশন বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই মামলা প্রসঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলার রায়ের উদ্দেশ্য একটাই, যাঁরাই ব্যবসা করছেন, পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করছেন, এখানে যেন প্রতিযোগিতা থাকে। প্রতিযোগিতা থাকলে ন্যায্যমূল্যে ভালো পণ্য ও সেবা পাওয়া যাবে।

মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ হাজার পোশাক বানাতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীতে। তবে তাঁদের কোনো কার্যালয় নেই। লালবাগে একটি কারখানা আছে যেখানে পোশাক তৈরি করা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পোশাকের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা রাখা হয়।

ইব্রাহিম মোল্লার দাবি, ২০০৩ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে দরপত্রের মাধ্যমে তিনি ভিকারুননিসা স্কুলের পোশাক তৈরির কাজ পান। এরপর আর দরপত্র ডাকা হয়নি। তবে তিনি এই কাজ প্রতিবছর পাচ্ছেন।

বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠিত হয়। অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন আনাই এর লক্ষ্য। প্রতিযোগিতামূলক দামে জনসাধারণের পণ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণেও এই কমিশন কাজ করে। ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইনটি হয়। এর আগে ১৯৭০ সালে করা মনোপলিস অ্যান্ড রেসট্রিকটিভ ট্রেড প্র্যাকটিস অরডিন্যান্স দেশে বলবৎ ছিল। গত চার বছরে প্রতিযোগিতা কমিশনে চারটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একটি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া আছে। এখন বিচারাধীন ১১টি মামলা।

এদিকে ১০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরির একচেটিয়া ব্যবসার কারণে আরেকটি মামলায় রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে প্রতিযোগিতা কমিশন। একক প্রতিষ্ঠান বা দরজি থেকে পোশাক বানানো বাধ্যতামূলক না করে এর বিপরীতে তিনটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করতে রাজধানী আইডিয়াল স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

Also Read: স্কুলের পোশাক তৈরির একচেটিয়া ব্যবসা চলবে না