Thank you for trying Sticky AMP!!

যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই যাত্রা

বিকল্প যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে গাবতলী এলাকা পার হচ্ছেন যাত্রীরা। আজ গাবতলী এলাকায়

দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার অন্যতম পথ গাবতলী হয়ে কয়েক দিন ধরেই বাড়ির দিকে ছুটছেন লোকজন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে বিকল্প যানবাহন হিসেবে তাঁরা অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করছেন। তবে কাল বুধবার থেকে আট দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার আগের দিন আজ মঙ্গলবার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

বেলা তিনটায় সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাঁরাই গাবতলী এসেছেন, তাঁরা হেঁটেই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। আগের দিনগুলোতে এই পথ হয়ে যাঁরা ঢাকা ছেড়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগকেই গাবতলী পশুর হাটে সামনের সড়ক থেকে বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে করে ঢাকায় ছাড়তে দেখা গেছে। তবে আজ এই এলাকায় মোটরসাইকেল ছাড়া বিকল্প তেমন কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। বাড়ি যেতে হবেই, এই সংকল্প নিয়ে যাঁরা রওনা করেছেন, তাঁরা গাবতলীতে এসে গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই সামনের দিকে এগোচ্ছেন।

স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন মোহাম্মদপুর এলাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনিসুল হক। বেলা সোয়া তিনটায় গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর গোড়ায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।‌ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। থেকে কী করব? তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি। গাবতলী এসে কোনো গাড়ি পাইনি। সামনে গিয়ে দেখছি, কোনো যানবাহন পাওয়া যায় কি না।’ আনিসুল হকের ভাবনা, ভেঙে ভেঙে হলেও তিনি সিরাজগঞ্জে গিয়ে পৌঁছাতে পারবেন।

পোশাক কারখানার দুই নারী কর্মী প্রায় ২৫ মিনিট অপেক্ষার পর একটি মোটরসাইকেলে করে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হলেন। তাঁরাও একই কথা বললেন, ‘সব বন্ধ থাকে। থেকে কী করব?’

গাবতলী এলাকায় এমনও কিছু যাত্রীকে পাওয়া গেছে, যাঁরা দুই ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে ঢাকা ছাড়তে পারেননি। এখনো অপেক্ষা করছেন।
গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ফয়সাল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ গ্রামে ফেরা মানুষের চাপ অনেক বেশি। তবে তাঁরা একটি গাড়িও গাবতলী–আমিনবাজার সেতু হয়ে যেতে দিচ্ছেন না। লোকজন যে যাঁর মতো করে হেঁটে সামনে এগোচ্ছেন।

বিকল্প যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে গাবতলী এলাকা পার হচ্ছেন যাত্রীরা। আজ গাবতলী–আমিনবাজার এলাকায়

দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ, লোকজন বাড়ি যাবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে এই সার্জেন্ট ধারণা করে বললেন, গাবতলী-আমিনবাজার সেতু পার হওয়ার পর হয়তো বিভিন্ন উপায়ে তাঁরা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাবেন।

এদিকে গাবতলী এলাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেল, পুলিশের কড়াকড়ির মধ্যেও কয়েকটি মিনিবাস পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।‌ মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড নামের একটি পরিবহনের সুপারভাইজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাট পর্যন্ত মাথাপিছু ৩০০ টাকা করে নিচ্ছেন। ‌

কয়েকটি প্রাইভেট কারের চালককেও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। প্রাইভেট কারে করে যাঁরা পাটুরিয়া ঘাটে গেছেন, তাঁদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৬০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

গাবতলী-আমিনবাজার সেতু পার হয়ে দেখা গেছে, গাবতলী থেকে হেঁটে যাঁরা এই সেতু পার হয়েছেন, তাঁদের কেউ রিকশায়, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কেউ ব্যাটারিচালিত রিকশা–লেগুনা, কেউবা মোটরসাইকেলে করে তাঁদের গন্তব্যর দিকে রওনা হয়েছেন। যাঁরা সেতু পার হয়েও যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেননি, তাঁদের হেঁটেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে।

গাবতলী টার্মিনাল থেকে হেঁটে গাবতলী-আমিনবাজার সেতুর পার হয়েও কোনো ধরনের পরিবহন পাননি যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি মাদ্রাসার দুজন শিক্ষার্থী। এই দুই শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়ি নওগাঁর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কীভাবে যাবেন, এমন প্রশ্নে এই দুই শিক্ষার্থী বললেন, রাস্তায় বিকল্প যানবাহনের এত সংকট, তাঁরা জানতেন না। তবে মাদ্রাসা থেকে যেহেতু বেরিয়েছেন। গ্রামের বাড়ি নওগাঁতে যেকোনো উপায়েই হোক তাঁরা যাবেন।