Thank you for trying Sticky AMP!!

রূপনগর পোড়া বস্তিবাসীর সড়কে হয়েছে ঠাঁই

ফাইল ছবি

‘আগুনে সব হারাইছি। সরকার থাকতে দিছিলো বঙ্গবন্ধু স্কুলে। অহন স্কুল খুলছে। ওই হান থাইকাও বাইর কইরা দিলো। খাওন দেওয়াও বন্ধ। বৃহস্পতিবার থাইকা ছইল–পইল লইয়া রাস্তায় আছি। আমরা এই দ্যাশেরই লোক। সরকার বাহাদুর আমাগো আর দেখবো না? কী দিয়া কী হইবো?’ বলছিলেন সহিদা বেগম। ১৬ আগস্ট মিরপুরের রূপনগর ঝিলপাড় বস্তির ভয়াল আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনে। কিন্তু ক্লাস চালু হওয়ায় তাঁর মতো কয়েক শ মানুষ শেষ আশ্রয়টি খুইয়েছেন। তাঁদের নতুন আশ্রয় বিদ্যালয়টির সামনের সড়ক।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটপাতে এক সারিতে বসে আছেন অসংখ্য মানুষ। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ঘিরে ধরছেন। জানতে চাইছেন সরকার তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে কি না।

গত বৃহস্পতিবার থেকে একপ্রকার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো এসব মানুষ উপায়ান্তর না দেখে হন্যে হয়ে বাড়ি ভাড়া খুঁজছেন। কিন্তু ভাড়া মিলছে না। পেশায় রিকশাচালক মহসিন দুই হাজার টাকা ভাড়ায় বস্তিতে একটি ঝুপড়িঘরে থাকতেন। আগুন থেকে ঘরের আসবাব, রান্নার বাসনকোসন কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। তিন দিন ধরে মিরপুর–৭ ও মিরপুর–৬ নম্বর সেকশনে বাসা খুঁজেও ভাড়া পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পোড়া বস্তির লোক বলে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইছে না। দু–একজন দিতে চাইলেও তিন হাজার টাকার ঘরভাড়া সাড়ে চার হাজার চাইছে।

এদিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ পোড়া বস্তিতেই রাত কাটাচ্ছেন। এঁদের কেউ কেউ মাথার ওপর প্লাস্টিকের ছাউনি দিতে পারলেও অনেকে তা–ও জোগাড় করতে পারেননি। দিনের বেলা কড়া রোদ আর রাতে মশার কামড়ে দুর্বিষহ অবস্থায় সময় কাটছে তাঁদের। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বহু গুণ বেড়ে যায় ঘরহারা মানুষগুলোর।

পোড়া বস্তিতে প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে পরিবার–পরিজন নিয়ে রাত কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী নূর আল আমিন। ১৬ আগস্ট বিকেলে যে ঘর থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল, সন্ধ্যার পর ফিরে দেখে সেই ঘর দাউ দাউ করে জ্বলছে। বইপত্র, খাতা–কলম সব পুড়ে শেষ। আল আমিনের ভাষ্য, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। আগুন সব শেষ করে দিল। সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা। আবার বইপত্র কিনতে অনেক টাকা লাগবে। এই টাকা আমাকে কে দেবে?’

আল আমিন মিরপুর–২ নম্বরে অবস্থিত জার্মান কারিগরি কেন্দ্রের শিক্ষার্থী। তার মতো এমন আরও অনেক শিক্ষার্থী অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে শিক্ষাজীবন সবে শুরু হয়েছে, এমন শিশুশিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

পোড়া বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই রান্না করতে দেখা গেছে অনেক পরিবারকে। এ রকম দুজন নার্গিস ও রহিমা বেগম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ করায় বাধ্য হয়ে নোংরা পরিবেশে রান্না করতে হচ্ছে তাঁদের। সিটি করপোরেশন থেকে প্রথম দিকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হলেও এখন কেউ খাওয়ার পানি সরবরাহ করছে না। তাঁরা প্রত্যেকে সাহায্য হিসেবে ৩০ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ১ কেজি ডাল, একটি শাড়ি পেয়েছেন।

খোলা বস্তিতে মায়েরা তাঁদের কন্যাসন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সন্ধ্যা নামলে অনেকেই মেয়েদের আত্মীয়পরিজনের বাসায় রেখে আসছেন। কিন্তু এ রকম কত দিন চলবে? ঠিক জানেন না হাজেরা বেগম। তিনি বলেন, ‘এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। রাতের বেলা খোলা বস্তিতে পুরুষ মানুষ থাকতে পারলেও মহিলারা কীভাবে থাকবেন? সরকার আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। নয়তো এখানে ঘর তোলার অনুমতি দিক।’

নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রূপনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ঝিলপাড় বস্তির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। রাত–দিন পুলিশের ২০ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।

বস্তিবাসীর পুনর্বাসন সম্পর্কে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ বলেন, ‘প্রথমে বস্তিতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ নির্মাণ করা হবে। এরপর বস্তিবাসী গৃহনির্মাণের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও আমার নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। বস্তিতে নিরাপদ রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও থাকবে।’