Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্প্রীতির বার্তায় ইফতার

প্রতিদিন ২০০ রোজাদারকে ইফতারি দেয় সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার কর্তৃপক্ষ। রমজান মাসজুড়ে চলবে এ কার্যক্রম। ছবি: দীপু মালাকার
>

সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার থেকে প্রতিদিন ২০০ রোজাদার বিনা মূল্যে ইফতার পান।

এক ধর্মের সঙ্গে আরেক ধর্মে আছে রীতিনীতির ভিন্নতাও। তবে সব ধর্মেই আছে মানবিকতা এবং সম্প্রীতির কথা। মানুষের প্রতি মানুষের সেই সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির দেখা মিলল গতকাল বুধবার রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে। এই বৌদ্ধবিহার রোজার মাসে বাসাবো ও আশপাশের এলাকার দুস্থ মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেয়।

কয়েক বছর ধরে রমজান মাস এলেই বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা বিনা মূল্যে রোজাদারদের মাঝে ইফতারি বিতরণ করেন। সেই ইফতারি নিতেই গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় হাজির পেয়ারা বেগম। গৃহকর্মীর কাজ করেন। আট বছর ধরে রোজার মাসে বৌদ্ধবিহার থেকে ইফতারি নিয়ে তিনি ইফতার করেন। বাড়ি বগুড়া। নদীভাঙনে বসতবাড়ি, জমি হারানোর পর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন মাদারটেক এলাকায়।

পেয়ারা বেগম বলেন, ‘রোজা রাইখা আগে খালি পানি আর মুড়ি খাইতাম। পরে অন্য বুয়াদের কাছে শুইনা এইখান থাইকাই ইফতার করি। ইনারা ইফতারি দিতাছে। ইনাগো সওয়াব হইতাছে। আমি হেগো লাইগা সব সময় দোয়া করি।’

বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুরা জানান, প্রতিদিন ২০০টি করে ইফতারির প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে রোজাদারদের মাঝে। আগে ভিক্ষুরা নিজেদের হাতে ইফতারি বানাতেন। তারপর তা রোজাদারদের দেওয়া হতো। তবে ২০১৭ সাল থেকে গ্যাস–সংকটের কারণে বৌদ্ধবিহারের পাশের একটি হোটেল থেকে কেনা ইফতারি সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিহারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বুদ্ধপ্রিয় মহাথের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ইফতারি বিতরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্তপীড়িত মানুষকে সেবা করা, মানবতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসতার কথা বলে। আর ইসলামও শান্তির ধর্ম। তবে সবচেয়ে বড় বিষয়, আমরা সবাই মানুষ। সাধ্যমতো মানুষের জন্য কিছু করার জন্যই এই প্রচেষ্টা। সে জন্যই আমরা প্রতিবছর ইফতারি দিয়ে থাকি।’

গতকাল বিকেলে বৌদ্ধবিহারে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে পাঁচটা বাজতেই একে একে দুস্থ ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষ জড়ো হতে থাকেন বিহারের মূল গেটের সামনে। অপেক্ষায় থাকেন কখন গেট খুলবে। এদিকে বিহারের ভেতরে চলতে থাকে প্রস্তুতি। বৌদ্ধবিহারের পাশের একটি হোটেল থেকে কিনে আনা ইফতারসামগ্রীর প্যাকেট টেবিলে সারি দিয়ে রাখা হয়। এই প্যাকেটে আছে মুড়ি, ছোলা, জিলাপি, পিঁয়াজি, বেগুনি, আলুর চপ। ইফতারির পাশাপাশি মহাবিহার কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর জন্য দুই বেলা বিনা মূল্যে পানিও দিয়ে থাকে।

ছয়টার দিকে গেট খোলার আগে ভিক্ষুরা উপস্থিত প্রত্যেকের হাতে একটি করে টোকেন দেন। ইফতারি বিতরণে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, তাই টোকেন দিয়ে একটি লাইনে সবাইকে দাঁড় করানো হয়। ইফতারি নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। পুরুষদের জন্য আছে আলাদা সারি। তবে পুরুষদের সংখ্যা খুব কম। যাঁরা রোজা রাখেন, শুধু তাঁদেরই ইফতারির প্যাকেট দেওয়া হয়।

ইফতারি বিতরণ কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন মহাবিহারের আবাসিক ভিক্ষু নিব্বুতি থেরো। তিনি জানান, ২০১১ সাল থেকে তাঁরা ইফতারি বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিদিন এখন ২০০ জনের ইফতারের আয়োজন থাকে। তবে প্যাকেট শেষ হয়ে গেলে আবার দোকান থেকে এনে দেওয়া হয়।

বাসাবো বালুর মাঠ থেকে ইফতারি নিতে এসেছেন মো. ইউনুছ আলী। তিনি কারও কাছে হাত পেতে কিংবা চেয়েচিন্তে দুবেলা কোনোমতে খান। বয়োজ্যেষ্ঠ এই ব্যক্তি নিজের বয়স কত তা মনে করতে পারলেন না। বললেন, ‘সারা দিন রোজা রাইখা বাবা একটু ভালো খাবার পাইলে আত্মাটা শান্তি পায়।’