Thank you for trying Sticky AMP!!

সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার

রেললাইন পার হওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নিচে নামছে একটি পরিবার

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রিয়ম সরকার রাজধানী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন। যাবেন গ্রামের বাড়ি রংপুর।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসার সময় নির্ধারিত রয়েছে সকাল ৯টা ১০ মিনিট। ট্রেন আসার ঘণ্টাখানেক আগেই পরিবার নিয়ে স্টেশনে চলে আসেন প্রিয়ম।

ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে, স্টেশনে প্রবেশের সময় তা প্রিয়ম জানতে পারেননি। তাই ফাঁকা দেখে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে স্ত্রী-সন্তানসহ বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি।

সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে ঘোষণা করা হয়, রংপুর এক্সপ্রেস ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে। এই ট্রেনে করেই প্রিয়ম পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরবেন।

ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছে একটি পরিবার

ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে থাকা এই ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। যে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছুটতে শুরু করেন।

প্রিয়ম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও নড়েচড়ে বসেন। ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নিরাপদে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে তাঁদের অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে। সঙ্গে আছে জিনিসপত্রও।

সহজে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে পরিবারটির সদস্যরা ঝুঁকি নেন। অনেকটা পথ না ঘুরে তাঁরা ১ ও ২ নম্বর রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইনে নামার সময় প্রিয়মের স্ত্রী পড়ে যান। পরে স্বামীর হাত ধরে উঠে দাঁড়ান তিনি। আর কন্যাশিশুটি বাবার হাত ধরে রেললাইন পার হচ্ছিল।

এদিকে ১ নম্বর লাইন ধরে আসছিল রংপুর এক্সপ্রেস। ২ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল অন্য একটি আন্তনগর ট্রেন।

এমন দৃশ্য দেখে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যাত্রী প্রিয়মদের বারবার সতর্ক করছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা ঝুঁকি নিয়েই রেললাইনের ওপর দিয়ে দৌড়ে পার হন।

কোনো বিপদ না হওয়ায় উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন স্বস্তি প্রকাশ করেন। কেউ কেউ অবশ্য এমন ঝুঁকি নেওয়ার জন্য পরিবারটির কর্তাকে দূর থেকে ভর্ৎসনা করেন।

পরে প্রিয়মের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। ঝুঁকির বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে বলা হলে তিনি কিছুটা অনুতপ্ত হয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে চলে যান।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন

আজ বুধবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রিয়মের পরিবারের সদস্যদের মতো আরও অনেককে এমন ঝুঁকি নিতে দেখা যায়।

স্টেশনে থাকা একাধিক রেলকর্মী বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে হরহামেশাই এমন দৃশ্য দেখা যায়। যাত্রীরা সময় বাঁচাতে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভুলে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপার হন। আর এতে দুর্ঘটনাও ঘটে।

একইভাবে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন সবুজ মিয়া। তাঁর গন্তব্যও রংপুর। পুলিশে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য যাচ্ছেন তিনি।

সবুজ অন্য প্ল্যাটফর্মে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পরে ট্রেন আসার ঘোষণার পরপরই তিনি রেললাইনের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হন।

পরে সবুজ মিয়া বলেন, ‘অন্য যাত্রীদের দেখাদেখি সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই রেললাইন পার হয়েছি। কাজটা করা ঠিক হয়নি।’

যাত্রীদের এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হওয়া ঠেকাতে স্টেশনে দায়িত্ব পালনরত কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এই কাজ করে। যাত্রীরা জানে, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও তাঁরা সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে পার হন।’

রেল পুলিশের এই সদস্য বলেন, স্টেশনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা তো চোখের সামনেই এই দৃশ্য দেখছেন। তাঁদের উচিত ট্রেন আসার সময় যাত্রীদের বোঝানো। যাত্রীদের ঝুঁকি না নিতে নিরুৎসাহিত করার সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে কয়েকজনের কাছে গেলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।