Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকার চাল সংগ্রহে পিছিয়ে, দাম বাড়ছে

ফাইল ছবি

করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ চালের চড়া দামে বিপাকে রয়েছেন। রাজধানীর কাজীপাড়ার রাবেয়া খাতুন খণ্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, আগে চার বাসায় কাজ করে মাসে ছয় হাজার টাকা পেতেন। করোনার কারণে এক বাসায় কাজ বন্ধ। ফলে আয় কমেছে। অন্যদিকে বাজারে চাল, ডাল, সবজি, ডিম, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম চড়া।

বোরো ধান ওঠার পরপরই গত এপ্রিলের শেষ দিকে সরকার নতুন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঘোষণা করে। এতে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার কথা জানানো হয়। চালের হিসাবে মোট সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ১৬ লাখ টনের মতো। গত সোমবার পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে ৭ লাখ ২২ হাজার টন। সময় বাকি আর তিন কর্মদিবস।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত চালকলমালিকেরা চুক্তি অনুযায়ী চাল না দেওয়ায় লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ না হলে আমরা আমদানি করব। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া আছে।’ তিনি জানান, সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর আগামী মাসে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় থাকবে সংগ্রহ পরিস্থিতি।

এখন সরকারের কাছে চালের মজুত আছে সাড়ে ১০ লাখ টনের মতো। অবশ্য করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে সরকারের নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরেও নতুন নতুন খাতে চাল বরাদ্দ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত মজুত না থাকলে বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকারের চালের মজুত কমে গেলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। তবে সরকারি মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে যাতে চালের সরবরাহে কোনো সংকট না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, দেশে চালের উৎপাদন যতটা হয়েছে, তাতে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়।


সরকার চালের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠে নামিয়েছে। গত কয়েক দিনে রাজধানীর তিনটি বড় বাজার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে চালের দোকানে ৯২টি অভিযান চালিয়ে তারা ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

অভিযানের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুচরা দোকানে যদি অতিরিক্ত মুনাফা করা হয়, তাহলে আমরা জরিমানা করছি। মিলগুলোতেও অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

চালের পাইকারি বাজার পরিস্থিতি সুখকর নয়। চালের বড় ব্যবসাকেন্দ্র নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় প্রতি সপ্তাহেই চালের দাম কিছু কিছু বাড়ছে বলে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানান। বাড়ছে ধানের দামও। মোটা ধান প্রতি মণ ১ হাজার ৫০ টাকা, মাঝারি ধান ১ হাজার ১০০ টাকা ও চিকন ধান ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দামটি বেশ ভালো বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চালকলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো, মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাস ধরেই ধানের দাম বাড়ছে। আমরা যে দামে ধান কিনছি, তাতে চাল বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। তাই চালের দাম বাড়ার জন্য আমাদের দোষ দেওয়া ঠিক না।’

এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কি চাল আমদানি বাড়ানোর জন্য শুল্ক কমাবে? শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতকে আমদানির সুযোগ দিলে দাম কমবে। আবার প্রচুর চাল দেশে আসার ফলে দাম কমে গিয়ে আমন মৌসুমে ধান আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। চাল আমদানিতে এখন মোট করভার সাড়ে ৬২ শতাংশ। চাষিদের সুরক্ষা দিতে সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়।

দেশে উৎপাদনের যে পরিস্থিতি, তাতে চালের ঘাটতি থাকার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) চলতি সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বাংলাদেশে চাল উৎপাদন আগের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি দাঁড়াবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত বোরো মৌসুমে প্রায় ২ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। পুরো বছরের মোট উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ৬০ লাখ টনের বেশি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মনে করে, চলতি বছর আমন ওঠার আগ পর্যন্ত দেশে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবির প্রথম আলোকে বলেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই, বরং উদ্বৃত্ত চাল আছে। কোথাও চাল মজুত হচ্ছে কি না, অন্য কোনো কারণে দাম বাড়ছে কি না, তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত।