Thank you for trying Sticky AMP!!

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সাফসুতরো করা হচ্ছে

সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন–অবহেলায়। জমে ওঠে ধুলাময়লা, আবর্জনার স্তূপ। এখন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে চলছে সাফসুতরোর কাজ। গতকাল রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি সাফসুতরো করা হচ্ছে। বরাবরের মতোই সারা বছর হতশ্রী দশায় ছিল সৌধ চত্বর। তিন সপ্তাহ আগে আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সৌধ এলাকা ধোয়ামোছার কাজ।

গতকাল সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সৌধের চৌহদ্দির ভেতরে গণপূর্ত অধিদপ্তর আর বাইরে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও আলবদর–রাজাকারের হাতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটি স্বাধীনতার দুই যুগের বেশি সময় অবহেলায় পড়ে ছিল। ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদদের সন্তানদের সংগঠন ‘প্রজন্ম ৭১’ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিরক্ষার দাবি তোলে ও একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করে। ১৯৯৩ সালে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৯৬ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সৌধের নির্মাণকাজ হয়। উদ্বোধন হয় ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। এরপর থেকে প্রতিবছর বুদ্ধিজীবী দিবসকে কেন্দ্র করে সৌধের পরিচর্যা করা হয়। তবে প্রায় সব সময়ই বিকেলে এখানে দর্শনার্থীরা আসেন। এখন পরিষ্কারের কাজ চলায় ভেতরে ঢোকা বন্ধ রাখা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাজের তত্ত্বাবধায়ক সেকান্দার আলী এ প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন, সারা বছর স্মৃতিসৌধের প্রতি নজর দেওয়া হয় না। বুদ্ধিজীবী দিবস আসার আগে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়। তিনি বলেন, এবার সৌধ এলাকা থেকে কয়েক মণ আবর্জনা–পরিষ্কার করা হয়েছে। আর দুদিনের মধ্যে তাঁদের কাজ শেষ করতে হবে।

দেখা গেল, স্মৃতিসৌধের বাইরে বেড়িবাঁধ সড়কের একপাশে জড়ো করা হয়েছে আবর্জনা। সেখানে পলিথিন ছাড়াও দর্শনার্থীদের ফেলে দেওয়া চিপস–বিস্কুটের খালি প্যাকেট, বাদামের খোসা, ডাবের খোলসহ নানা বর্জ্য।

স্মৃতিসৌধ দর্শনে এসেছেন প্রবাসী দন্ত চিকিৎসক ও শৌখিন আলোকচিত্রী মামুনুর রশিদ। বললেন, ১৯ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় মাস আগে দেশে ফিরেছেন। বিজয়ের মাসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে এই সৌধে এসেছিলেন। কিন্তু পরিবেশ দেখে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বললেন, সারা বছর সৌধটি অবহেলা–অযত্নে থাকে, এমন হওয়া উচিত নয়। নিয়মিত এর পরিচর্যা করা দরকার। বিশ্বের অন্য দেশে এ ধরনের স্থাপনাগুলো খুব যত্ন–পরিচর্যায় রাখা হয়। সেখানে গেলে মানুষের মনে আবেগ ও শ্রদ্ধা জাগে। কিন্তু এখানে এ ধরনের স্থাপনার প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা–অবহেলাই দেখা যায়।

পাওয়া গেল দর্শনার্থী তাজরীনা সোহেলীকে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। বললেন, মাঝেমধ্যেই এখানে আসেন। দিন পনেরো আগে তিনি এসে আরও খারাপ অবস্থা দেখেছিলেন।

গতকালও দেখা যায়, সৌধের মূল স্তম্ভের লাল ইটের দেয়ালে জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ কালো দাগ। পরিচর্যার অভাবে এমন দশা। দর্শনার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বানানো কালো মার্বেল পাথরের বর্গাকৃতি উঁচু স্তম্ভটি এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি। সেখানে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে লেগে আছে আবর্জনার ছোপ। কর্মীরা তা মোছার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সৌধ এলাকাটি সীমানা ঘেরাও থাকলেও সহজেই গ্রিল টপকে বখাটেরা ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া সৌধের সামনের আঙিনায় এখনো গরু–ছাগল চরে বেড়ায়। আনসার, পাহারাদারসহ ১০ জন লোক এখানে কর্মরত। কিন্তু সব সময় সবাইকে পাওয়া যায় না।

শহীদ বুদ্ধিজীবী রাশীদুল হাসানের মেয়ে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রোকাইয়া হাসিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত নান্দনিক একটি স্থাপনা, অথচ সারা বছরই এমন বেহাল থাকে, যা খুবই কষ্ট ও বেদনাদায়ক। এই স্মৃতিসৌধ যে খুবই জরুরি এবং জাতির ইতিহাস বহন করে, তা আমরা দিন দিন যেন ভুলে যাচ্ছি। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা।’

স্মৃতিসৌধের উন্নয়নের জন্য এখানে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। তবে সৌধের পেছনে দর্শনার্থীদের চলাফেরা ও বসার জন্য ছোট পার্ক করা হয়েছে। এর পেছনে সিটি করপোরেশন করেছে কবরস্থান। সৌধের পেছনের পার্কেও গতকাল বিভিন্ন স্থানে ময়লা ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ডিএনসিসির কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী সৌধের সামনের আঙিনায় ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। ফলে পুরো এলাকা হয়ে উঠেছিল ধুলা–ধূসরিত। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, তাই বেশি ধুলা জমেছে। বুদ্ধিজীবী দিবসের জন্য এখন কাজ হচ্ছে।