Thank you for trying Sticky AMP!!

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধের দাবি ১৩ সংগঠনের

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ করছেন নগরবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার তাগিদে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সসহ (বিআইপি) ১৩টি সংগঠনের নেতারা। অপর সংগঠনগুলোর মধ্যে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শীর্ষস্থানীয়রা রয়েছে।

সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নের নামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মারক ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বহুসংখ্যক গাছ কেটে সেখানে হোটেলসহ বেশ কিছু ইট–পাথরের স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সোহরাওয়ার্দীর বিশাল উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ঐতিহাসিক সেই উদ্যানকে খণ্ডিত করে, ইট–পাথরের কাঠামো এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ বানিয়ে কোনো অবস্থাতেই ধ্বংস করা যাবে না। ইতিহাসকে রক্ষা করতে হলে তার পরিবেশ ও স্থানিক অবস্থানকেও রক্ষা করতে হয়।

সংগঠনগুলোর দাবি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ এবং পরিবেশ-প্রতিবেশগত প্রয়োজনীয় সমীক্ষা করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন করে পুনরায় প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়নে যথোপযুক্ত পেশাজীবী যথা নগর–পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নগর নকশাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্যানতত্ত্ববিদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিবেশ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানীদের রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বিবৃতিতে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকার অক্সিজেনের আধার ও ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত উদ্যান। নগর–পরিকল্পনাবিদদের কোনো রূপ সম্পৃক্ত না করে মহাপরিকল্পনার নামে আদর্শ পরিকল্পনাগত পদ্ধতি অনুসরণ না করে উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হলে যে পরিণতি হওয়ার কথা ছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ক্ষেত্রেও সেই একই পরিণতিই হয়েছে। স্থাপত্য অধিদপ্তরের ডিজাইন করা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিকল্পনা, পরিবেশ ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিবিধান অনুসরণ করা হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবেশের ওপর এমন ধ্বংসযজ্ঞ হওয়ার কথা ছিল না। ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঠিক পরিকল্পনা তৈরির মাধ্যমে ঐতিহাসিক স্মৃতি ও পরিবেশ—দুটোই রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিআইপির নেতারা।

Also Read: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ বাঁচাতে প্রতিবাদ, উত্তাপ ফেসবুকেও

আরও ১১ সংগঠনের বিবৃতি

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ১১টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করতে পারে, তার জন্যই এই বিশাল চত্বর বা উদ্যানের অবয়ব সংরক্ষণ করা জরুরি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থানটিতে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ভাস্কর্য নির্মাণ করে সামনে বিশাল খোলা প্রান্তর অক্ষত রাখা হোক। আর যে স্থানটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সে স্থানেও স্মারক বা স্মৃতিফলক রাখা হোক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব ধরনের হোটেল নির্মাণ ও পাঁচ শ গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোনো বিনোদনকেন্দ্র নয়, এটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং অক্সিজেনের অফুরন্ত উৎসকে নিধন করা হচ্ছে।

যৌথ বিবৃতি দেওয়া সংগঠনগুলো হলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই, বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।

এ ছাড়া সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এক বিবৃতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।