Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টেশনে যাত্রী আছে, সেবা নেই

বসার জায়গা নেই, তাই প্ল্যাটফর্মের মেঝে ও রেললাইনের ওপর বসে আছেন যাত্রীরা। গত রোববার রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো

বেলা দুইটা, গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন। প্ল্যাটফর্মের নোংরা মেঝেতে বিছানো কাগজের ওপর বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন দয়াগঞ্জের আমেনা বেগম (৬০)। যাবেন নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, বড় মেয়ের বাসায়। একই গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় রেললাইনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে বসে আছেন জুরাইন কবরস্থান রোডের বাসিন্দা রহমান মিয়া। তাঁর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। সেখানে বসে ঝিমাচ্ছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর কমলাপুরগামী একটি ট্রেনের হুইসেলের শব্দে সেখান থেকে উঠে আসেন তিনি।

এই দুজনের মতো আরও অর্ধশতাধিক যাত্রীকে গত রোববার গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনে এভাবে বসে-দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনটিতে যাত্রীদের বসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র বিশ্রামাগারটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। নেই পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা। অথচ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে যাত্রীর কমতি নেই। ট্রেনে খুব অল্প সময় ও খরচে গন্তব্যে যাওয়া যায়। স্টেশনটির এই সমস্যা সমাধান হলে ট্রেনে করে কমলাপুর ও নারায়ণগঞ্জ যেতে যাত্রীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, স্টেশনটির চারপাশে খোলা। এ কারণে স্টেশনে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। স্টেশনে থাকা ভবঘুরেরা মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা স্টেশনে যাত্রীদের হয়রানি, নারী উত্ত্যক্তসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। রেলওয়ে বলছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সেবা পাচ্ছেন না গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনের যাত্রীরা। এখন স্টেশনটিকে প্রায় পরিত্যক্তই বলা যায়। তবে স্টেশনটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্টেশনের সামনে দিয়ে ঢাকা-মাওয়া দুই লেনের রেললাইন করা হবে। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডাবল লাইন করা হবে। তখন যাত্রীসেবার মান বাড়বে। যাত্রী ছাড়া কেউ প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারবে না।

গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পথে দুটি ট্রেন দিনে ৩২ বার যাতায়াত করে। এই স্টেশন থেকে কমলাপুর ও নারায়ণগঞ্জে দিনে যাতায়াত করেন কমবেশি তিন হাজার যাত্রী।

রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনে স্টেশনমাস্টারের কক্ষের দক্ষিণ পাশে যাত্রীদের জন্য ছোট আকারের একটি বিশ্রামাগার। তবে সেটি তালাবদ্ধ। পাশের কক্ষে টিকিট বিক্রি করছেন রেলওয়ের এক কর্মী। প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে-বসে আছেন আছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী। স্টেশনমাস্টারের কক্ষের সামনে ছোট তিনটি বেঞ্চ। সেগুলোতে গাদাগাদি করে নয়জন বসে আছেন। স্টেশনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। স্টেশনের কোথাও যাত্রীদের খাওয়ার বা হাত-মুখ ধোয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভবঘুরেরা।

রোববার দুটি ব্যাগ আর কোলের সন্তানকে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ফরিদা আক্তারকে। তিনি যাবেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ফরিদা জানালেন, গেন্ডারিয়ায় তাঁর বাবার বাড়ি, ফতুল্লায় স্বামীর বাড়ি। যাতায়াতে কম সময় লাগায় তিনি রেলপথে বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু স্টেশনটিতে যাত্রীসেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে শৌচাগারে যেতে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে ঢোকেন যাত্রী জামাল হোসেন। এ সময় তাঁকে তালাবদ্ধ বিশ্রামাগারের ভেতর থাকা শৌচাগারের চাবি দেন স্টেশনমাস্টার জহুরুন্নেছা। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্রামাগারটি পরিত্যক্ত। তাই সেটি তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে যাত্রীদের প্রয়োজনে বিশ্রামাগারের ভেতর থাকা শৌচাগারের চাবি দেওয়া হয়। বাকি সময় তালা লাগানো থাকে। সারা দিন খোলা রাখলে ভাসমান লোকজন তা নোংরা করে ফেলে।

স্টেশনমাস্টার জহুরুন্নেছা বলেন, কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে যাত্রীসেবা শতভাগ নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, এখন স্টেশনে গড়ে আধা ঘণ্টা পরপর ট্রেন যাতায়াত করে। এ জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন স্থানে সীমিত আকারে বসার জায়গা আছে।