Thank you for trying Sticky AMP!!

‘হঠাৎ রাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে কুকুর’

কুকুর অপসারনের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্বলন করে

আজিমপুর সরকারি কলোনির বাসিন্দা স্মিতা দে। তিনি বাসার সামনে তিনটি কুকুরকে নিয়মিত দুই বেলা খাবার দিতেন। দুটি কুকুরের নাম ছিল রাস্টি ও জিমি। আরেকটার কোনো নাম ছিল না। স্মিতা দে বলেন, ‘তারপর একদিন ভোরে ওদের নিয়ে যায় সিটি করপোরেশনের লোকেরা। আমি গত ৮ বছর ধরে ওদের দেখাশোনা করতাম। ওরা কারও ক্ষতি করত না। ওরা আর ফেরেনি। এই কষ্ট কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় স্মিতা দের সঙ্গে। নগরীতে কুকুর অপসারণের প্রতিবাদ করতে স্মিতাসহ শত শত প্রাণীপ্রেমী এই উদ্যানে এসেছেন। এই উপলক্ষে মানববন্ধন, র‌্যালি, গণস্বাক্ষর ও প্রদীপ প্রজ্বলনে অংশ নেন তাঁরা।

বিকেল তিনটার দিকে অ্যানিমেল লাভারস অব বাংলাদেশের (এএলবির) উদ্যোগে এই আয়োজনে শুরু হয়। প্রথমে উদ্যানে থাকা কুকুরদের খাবার দেন তাঁরা। এরপর ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে উদ্যান চত্বরে শোভাযাত্রার কর্মসূচি পালন করা হয়। এই আয়োজনের অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এনিমেল ওয়েলফেয়ার, বাংলাদেশ এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, ক্যাট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রাণীপ্রেমী দলের সদস্যরা।

এএলবির চেয়ারম্যান দীপান্বিতা হৃদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কুকুরগুলোকে আমরা এত বছর দেখে শুনে রাখতাম, হঠাৎ করে তা রাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ কুকুরগুলোকে অপসারণ না করে বৈজ্ঞানিক সমাধান হিসেবে বন্ধ্যা করা যেত। এ রকম মানবিক সমাধান থাকতেও সিটি করপোরেশন অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি বলেন, রাস্তার যেসব কুকুরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই অতটা হিংস্র নয়। এদের অনেককেই বন্ধ্যা (নিউটার) করা হয়েছে। যেখানে নিয়ে তাদের ফেলা হচ্ছে, সেটিও নিরাপদ নয়। সেখানে কুকুরগুলোর জন্য কোনো খাবার-পানি কিছুই নেই। এমন অমানবিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজকের এই আয়োজন।

কুকুর অপসারনের প্রতিবাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একটি পথ কুকুরকে আদর করছেন অংশগ্রহণকারীদের একজন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজীম করোনার পুরোটা সময় ক্যাম্পাসে কুকুরদের একবেলা করে খাবার দিতেন। তিনি জানালেন, করোনা প্রকোপ যখন শুরু হয় তখন পুরো ক্যাম্পাসে প্রায় ২০০ কুকুর ছিল। এখন আছে ১০০ এর বেশি কিছু। প্রতিদিন প্রায় ৬০ কেজি খাবার লাগত এসব কুকুরদের। তিনি বলেন, ‘কুকুরদের জীবন নেওয়ার অধিকার তো কারও নেই। অথচ তাদের ফেলা হচ্ছে ভাগাড়ে।’

প্রাণীপ্রেমীরা বলছেন, কুকুর বন্ধ্যাকরণ করা হলে এর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে। বন্ধ্যাকরণের ফলে কুকুরের আচরণে শান্ত ভাব চলে আসে, আক্রমণাত্মক আচরণ কমে যায়। বন্ধ্যাকরণের পাশাপাশি কুকুরকে জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া হলে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের ঘটনাও কমে যাবে। এটাই প্রাণীপ্রেমীদের চাওয়া।

পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. রাকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কুকুর সরানো হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘনও হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবেশে সকল প্রাণীর সহ অবস্থান চাই। এর ব্যত্যয় হোক আমরা চাই না।’

বিকেল জুড়ে এই আয়োজনে ছিল কুকুর অপসারণের প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।