Thank you for trying Sticky AMP!!

১১ বছরেও সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি

>
  • চাহিদার তুলনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অনেক কম
  • মালিকেরা নির্ধারিত জমার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেন
  • চালকেরাও মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন

যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে সরাসরি চালকদের পাঁচ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ১১ বছরেও সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়নি।

অটোরিকশার চালকেরা জানিয়েছেন, ২০০২ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে প্রায় ৩৭ হাজার টু-স্ট্রোক অটোরিকশা চলত। পরিবেশদূষণ রোধে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। পরে ১৩ হাজার সিএনজিচালিত ফোর স্ট্রোক অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়।

শ্রমিকনেতাদের দাবি, যাত্রী ও চালকদের চাহিদার তুলনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অনেক কম। এই সুযোগে অটোরিকশার মালিকেরা সরকার-নির্ধারিত জমার (ভাড়া হিসেবে চালকদের কাছ থেকে মালিকেরা যে টাকা নেন) চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিতে থাকেন। ফলে চালকেরাও মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে থাকেন। এতে অটোরিকশা খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং যাত্রী হয়রানি বাড়তে থাকে।

ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা শহরে বসবাস করা বৈধ চালকদের মধ্যে পাঁচ হাজার অটোরিকশা বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী, ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চালকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩ হাজার ১৯৬ জন চালক অটোরিকশার জন্য আবেদন করেন।

জানা গেছে, প্রক্রিয়াটি বন্ধের জন্য ২০০৮ সালেই ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আদালতে রিট আবেদন করা হয়। এতে চালকদের মধ্যে অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়াটি আটকে যায়। ২০১০ সালে রিটটি খারিজ হয়। এরপর আপিল ও রিভিউ আবেদনও মালিক সমিতির বিপক্ষে যায়।

ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, বাংলাদেশ অটোরিকশা চালক সমবায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আরেকটি রিট আবেদন করা হয়েছিল, যার নম্বর ৪৮১৮/২০১০। এই আবেদনে চালকদের পাঁচ হাজার অটোরিকশা ফেডারেশনকে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। ২০১২ সালে রিটের রায়ে এই সংগঠনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন এর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদন করে। এর নম্বর ২০০৬/২০১২।  

চালক ও মালিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে, এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে বিআরটিএ ও অটোরিকশা চালক-মালিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভায় বসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এবং ২০০৬/২০১২ নম্বর লিভ টু আপিল আবেদনটি প্রত্যাহার করা সাপেক্ষে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চালকদের অটোরিকশা বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের এপ্রিলে ওই লিভ টু আপিলটি প্রত্যাহার করতে বিআরটিএর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরের জুন মাসে লিভ টু আপিলটি প্রত্যাহার করে নেয় শ্রমিক ইউনিয়ন।

কিন্তু ২০১৪ সালে ফেডারেশনের পক্ষে আসা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আপিলের রায়ে ফেডারেশনের পক্ষে দেওয়া হাইকোর্ট বিভাগের রায়টি খারিজ করা হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে ফেডারেশন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে রিভিউ আবেদনটিও খারিজ হয়ে যায়।

অটোরিকশার চালকেরা জানিয়েছেন, এরপরও চালকেরা অটোরিকশা বরাদ্দ না পাওয়ায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। পরে ওই দিন বিআরটিএর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আইনি কোনো জটিলতা না থাকলে চালকদের অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়া হবে। গত মার্চ মাসে বিআরটিএ নিশ্চিত হয় চালকদের অটোরিকশা বরাদ্দ দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। এরপরও চালকেরা অটোরিকশা বরাদ্দ পাননি। তাই গত জুলাই মাসে ঢাকা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে আবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালকদের জন্য অটোরিকশা বরাদ্দের জন্য বিআরটিএতে আবেদন জানানো হয়।

আবেদনের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রীর তুলনায় ঢাকা শহরে অন্তত আরও ২০ হাজার অটোরিকশা থাকা উচিত। চালকদের অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়া হলে তাঁরা আর অতিরিক্ত জমা নেওয়ার অভিযোগ করতে পারবেন না। অটোরিকশা বেশি হলে এই খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে যাত্রী ধরে রাখতে সেবার মান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাত্রীভাড়াও কমাতে হবে।