Thank you for trying Sticky AMP!!

১৪৪ ধারা ভঙ্গ

>নানা ঘটনার ধারাবাহিকতা ও সমারোহে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল অনন্য ইতিহাস। সেসবের কিছু উজ্জ্বল মুহূর্তের কাহিনি নিয়ে এ আয়োজন।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে আসেন। তিনি পল্টন ময়দানের জনসভায় বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।’ ৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও একই কথা বলে বারুদে আগুন দিয়েছিলেন।

২৯ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জানুয়ারি সব শিক্ষায়তনে প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি সব শিক্ষায়তনে পূর্ণ হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি জনসাধারণও তখন একটু একটু করে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে।

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়। দশ–বারো হাজার শিক্ষার্থীর যে মিছিলটি বের হয়, তা মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের বাসভবনের সামনে গিয়ে স্লোগান দেয়, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’। এইদিন ছাত্রদের সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে হরতাল, ছাত্র ধর্মঘট ও মিছিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি যখন চলছিল, তখন ২০ ফেব্রুয়ারি ১ মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। তাতে সভা, বিক্ষোভ, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন। সে রাতে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের বেশির ভাগ নেতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে ভোট দেন। ১১ / ৩ (১) ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার প্রস্তাব গ্রহীত হয়। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন অলি আহাদ, আবদুল মতিন ও গোলাম মাওলা। মোহাম্মদ তোয়াহা ভোটদানে বিরত ছিলেন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি মতামতই উপস্থাপন করা হবে। ছাত্ররাই মতামত দেবে, কোন ধারার সঙ্গে তারা থাকবে। আবুল হাশিম জানিয়ে দেন, সর্বদলীয় পরিষদের সিদ্ধান্ত (অর্থাৎ ১৪৪ ধারা না ভাঙা) ছাত্রসভায় অগ্রাহ্য করা হলে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ স্বতঃসিদ্ধভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রসভা শুরু হয়। শামসুল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গেলে সমবেত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে তাঁর কণ্ঠস্বর তলিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে বক্তব্য দেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১০ জনের ছোট ছোট মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করে। শুরুতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও প্রথম মিছিলটি বের হয়ে আসার পরপরই একের পর এক ১০ জন করে মিছিলের সারি তৈরি হয়ে যেতে থাকে।

প্রথম ১০ জনের দলে কারা ছিলেন, কার নেতৃত্বে সেটা বেরিয়েছে, তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে সে মিছিল বেরিয়েছিল; কেউ বলেন, সে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডা. আলী আজমল (তাঁর নামটি কোথাও কোথাও রয়েছে আজমল হোসেন)। সবাই তখন কে কার আগে বের হবেন, তা নিয়ে উত্তেজিত হয়ে ছিলেন। একের পর এক ১০ জনের মিছিল বের হতে থাকলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তোলা সম্ভব ছিল না। তখন এই স্রোত ঠেকাতে পুলিশ ছাত্রদের লাঠিপেটা করতে শুরু করে, সঙ্গে চলে টিয়ার গ্যাসের শেল বর্ষণ।
সেটাই ছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রথম ঘটনা।

তথ্যসূত্র: ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ও তাৎপর্য/আবদুল মতিন, আহমদ রফিক
একুশের যত প্রথম/এম আর মাহবুব