Thank you for trying Sticky AMP!!

'কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে'

‘কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়ন: প্রয়োজন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীর সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২২ মে। ছবি: আশরাফুল আলম

কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে সেটা নিজের ও দেশের জন্য মঙ্গল হবে। আর এই কারিগরি ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার উন্নয়নে খাতভিত্তিক কর্মসূচি (সেক্টর ওয়াইড অ্যাপ্রোচ বা সোয়াপ) হাতে নিয়ে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রথম আলোর উদ্যোগে ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় ‘কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়ন: প্রয়োজন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীর সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর। তিনি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে সরকারের উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষাতেও (স্কুল ও মাদ্রাসায়) কারিগরি বিষয় (প্রকৌশল ১, ২ ও ৩) চালুর পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে ২৭ মে সভা হবে, সেখানেই চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া একটি প্রকল্পের অধীনে ৬৪০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় এসএসসি (ভোকেশনাল) চালু হবে ২০২০ সাল থেকে। আর ২০২১ থেকে প্রত্যেক স্কুল ও মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্স চালুর করার জন্য বলবে সরকার। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় ল্যাবরেটরি ও শ্রেণিকক্ষ দিতে পারবে, তাদের জন্য শিক্ষক দেবে সরকার এবং সেসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত (বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অনুদান) করা হবে। এ ছাড়া নবম ও দশম শ্রেণিতে একটি করে দক্ষতা বিষয় (১০০ নম্বরের) বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে দাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সচিব।

আইএলওর এ দেশীয় পরিচালক টুমো পটিআইনেন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। সরকারের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে উন্নয়ন সহযোগীদের দক্ষতা–বিষয়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

শ্রমবাজারে দক্ষতার ঘাটতির চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, প্রতিবছর ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। কিন্তু দেশের মধ্যে এত কর্মসংস্থান করা যাচ্ছে না। এ জন্য দেশের বাইরে কর্মসংস্থান খুঁজতে হচ্ছে। এ ছাড়া বহু বেকার হয়ে আছে। এর মূল কারণ হলো দক্ষতার অভাব। নতুন নতুন টেকনোলজি আসার কারণে ভবিষ্যতে এটার আরও অভাব হবে।

ইউনিসেফের জ্যেষ্ঠ শিক্ষা পরামর্শক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এই শিক্ষায় মেয়েদের ভর্তির তথ্য দেখলেই বোঝা যাবে কতটা বেড়েছে। দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দাতাদেরও যথেষ্ট আগ্রহ আছে। কিন্তু দাতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। এই সেক্টরের কাজের মধ্যেও (২২টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দক্ষতা–বিষয়ক কাজ হয়) সমন্বয়ের অভাব আছে। এই সমন্বয়টা কীভাবে করা হবে, সেটাই বড় বিষয়। তবে সমন্বয় করার ক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

কারিগরি শিক্ষায় খাতভিত্তিক কর্মসূচির (সোয়াপ) ওপর গুরুত্বারোপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সাবেক লাইন ডিরেক্টর জাকির হোসেন বলেন, এ জন্য প্রথম দরকার ভালো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া।

খাতভিত্তিক কর্মসূচির ওপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ বলেন, সোয়াপের অভিজ্ঞতা খুব ভালো। এতে বাংলাদেশ সরকার নেতৃত্বে থাকে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম কারিগরি শিক্ষায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল ১ থেকে ২ শতাংশ। সেটা এখন প্রায় ১৬ শতাংশ। প্রকল্প পাস হলে কোনো উপজেলায় কারিগরি প্রতিষ্ঠান বাদ থাকবে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন আইএলওর স্কিলস ২১ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ মানস ভট্টাচার্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের দলনেতা ডোর্থে বোসে, ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেশন সামিট অন ওয়ার্কার্স এডুকেশনের সভাপতি শাহ. মো. আবু জাফর, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সোশ্যাল সেক্টর বিষয়ক অর্থনীতিবিদ ঝিগাং লি, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার জ্যেষ্ঠ উন্নয়ন পরামর্শক রিফুল জান্নাত।