Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্লাস্ট আয়োজিত ‘নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অতিথিরা

আদালতের নির্দেশনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি

কাবিননামা সংশোধন, শিক্ষার্থীদের ফরমে মায়ের একক অভিভাবকত্ব, সাক্ষ্য আইনে বৈষম্যমূলক ধারা বাতিলের মতো বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার তেমন বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আইনে সুরক্ষা থাকলেও নারীরা নানাভাবে অবমাননাকর ও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন।

রোববার রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা: বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী আয়শা আক্তার। নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে উচ্চ আদালতের তিনটি রায়ের বিষয় উল্লেখ করেন তিনি।

মূল বক্তব্যে আয়শা আক্তার বলেন, মুসলিম বিয়েতে কাবিননামায় নারীকে তাঁর যৌন ইতিহাস ও বৈবাহিক অবস্থার বিবৃতি দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা ছিল না। এ ধরনের নীতি নারীর জন্য অবমাননাকর। উচ্চ আদালত কাবিননামায় নারীকে বৈষম্যমূলক এমন বিবৃতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। চলতি বছর উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা ফরমে অভিভাবক হিসেবে শুধু মায়ের নামও লিখতে পারবেন। সাক্ষ্য আইনে চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করে নারীকে হেনস্তা করার সুযোগ ছিল। সরকার সাক্ষ্য আইনে সংশোধন আনে। এ ছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে উচ্চ আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

সভায় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার। তিনি বলেন, যখনই কোনো রায় দেওয়া হয়, তখনই সেই রায়ের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দেওয়ার নির্দেশনা থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মায়ের অভিভাবকত্ব নিয়ে রুল জারি হয়েছিল ২০০৯ সালেই। সম্প্রতি রায় হয়েছে। নাইমা হায়দার বলেন, রায় হয়, কিন্তু রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখনো বিভিন্ন জায়গায় নিবন্ধন করতে গেলে লিঙ্গ কী, তা জানতে চাওয়া হয়। এটা কেন জানতে হবে, সে প্রশ্ন করেন নাইমা হায়দার।

মায়ের অভিভাবকত্ব প্রসঙ্গে এই বিচারপতি বলেন, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রেও হয়রানি হচ্ছে। ইচ্ছা করলেই তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন না। আইন ও রুলের বাইরে বিচারকেরা যেতে পারেন না। কাবিননামায় নারীর ‘কুমারিত্ব’ প্রসঙ্গটি বাদ দেওয়ার জন্য রায় হয়েছে। তবে সেই রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন আশা প্রকাশ করেন, আদালতের রায় বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাশে থাকবে। এ ছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে যদি কোনো আইন প্রণয়নের দরকার হয় বা আইন সংশোধনের দরকার পড়ে, সেগুলো একসঙ্গে করতে হবে।

পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আইন হয় এবং তা কিছু ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক হয়। তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমস্যায় পড়ে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সব সময় ডিএনএ না–ও পাওয়া যেতে পারে। ধর্ষণের সংজ্ঞাও ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর জন্য মানসিক সহযোগিতার বিষয়কে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।  

আদালতের পরিবেশ বিচারক নিয়ন্ত্রণ করেন উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন বলেন, আদালতে নারী বিচারপ্রার্থীর প্রতি বিচারকদের সহানূভূতিশীল আচরণ ও সচেতন হতে হবে। বিচারকদের দ্বারাও যদি কোনো ভুক্তভোগী অন্যায় আচরণের শিকার হন, তবে তিনি কোথায় প্রতিকার পাবেন?

সভায় বক্তারা আরও বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের বিষয়গুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং অধিকারকর্মীদের কাছ থেকেই আসে। সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে খুব কম ক্ষেত্রেই এগিয়ে আসে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মোজাহেরুল হক, ব্লাস্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন) শেখ মো. মুজাহিদ উল ইসলাম প্রমুখ।