Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের জামা কিনতে পরিবারের সঙ্গে বিপণিবিতানে এসেছে দুই শিশু। দুজনেরই পছন্দ কার্টুন আঁকা জামা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনের গাজী শপিং সেন্টারে

শুরুতেই শিশুদের কেনাকাটা

আনন্দ উৎসবে যেমন উপাদেয় খাবারের আবশ্যকতা অপরিত্যাজ্য, তেমনি সুন্দর পোশাকের প্রয়োজনীয়তাও পরিহার করা চলে না। মুসলমানদের জীবনে দুটো বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতরে পোশাক-পরিচ্ছদের কেনাকাটাই প্রাধান্য পায়। ঈদুল আজহায় প্রধান স্থানে চলে আসে কোরবানির পশু ক্রয়, পোশাক-আশাক ক্রয় পরের অবস্থানে চলে যায়।

পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দশক শেষ হতে চলল। দিনে দিনে নিকটবর্তী হচ্ছে আনন্দ উৎসবের দিনটি। আমাদের দেশে সাধারণত অধিকাংশ মানুষ ঈদ সামনে রেখেই পোশাক কিনে থাকেন। তাতে উৎসবে নতুন পোশাক পরার কাজও হয়, আবার সারা বছরের ব্যবহারিক প্রয়োজনও মেটে। এর ফলে ঈদুল ফিতরেই সারা দেশের ছোট–বড় বিপণিবিতান, হাটবাজারের দোকানপাটে জামা-জুতো, শাড়ি-চুড়ির মতো হরেক রকম পণ্যের সবচেয়ে বড় রকমের বেচাকেনা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর একাধিক বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেল, চিরায়ত রেওয়াজেই ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবে বিক্রিবাট্টা পুরোমাত্রায় গতি পায়নি। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরেফিরে ঈদের বাজারে নতুন কী এল, দরদাম কেমন, এসবই এখন পরখ করছেন। তাঁরা বাড়ির ছোটদের আবদার মেটাচ্ছেন আগে। বরাবর এমনই হয়। ছোটদের জন্য কেনাকাটা দিয়েই ঈদের বাজার শুরু হয়। ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় কথা হলো মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাসিন্দা ফেরদৌসী হাসানের সঙ্গে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছেন পোশাক কিনতে। তবে পছন্দ আর দরদামে বনিবনা হয়নি বলে ফিরে যাচ্ছিলেন। রাপা প্লাজার দ্বিতীয় তলাজুড়ে তৈরি পোশাকের দোকান। এখানে ‘টপ টু বটম’ নামের পোশাকের দোকানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা জানালেন, মেয়েদের পার্টি ফ্রকের দাম ১ হাজার ৪৯৫ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৯৫ টাকা, সুতির টপস, স্কার্ট-টপস, এসবের দাম ২৯৫ থেকে ৫৯৫ টাকা পর্যন্ত। লেগিংস পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ছেলেদের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও হাফ শার্টের সেট ৯৯৫ থেকে ১ হাজার ৪৯৫ টাকা।

এই বিপণিবিতানের এন এম মার্টের স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ জানালেন, পোশাকের দাম গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ বেড়েছে। তাঁরা দেশি আর চীনের তৈরির পোশাকই বেশি বিক্রি করেন। যে থ্রি–পিসের দাম গতবার ৮০০ টাকা ছিল, এবার তার দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা।

দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোও ঈদ সামনে রেখে শিশুদের জন্য হরেক রকম নকশা আর ডিজাইনের পোশাক এনেছে। বসুন্ধরা সিটির ‘দেশী দশ’–এর আউটলেটে ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ণাঢ্য হয়ে আছে ঈদের নতুন পোশাকে। ‘রঙ বাংলাদেশ’–এর শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, এবার তাঁরা পৃথিবীর চার উপাদান—আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসকে মূল ভাবনায় রেখে পোশাকের রং করেছেন। আগুনকে লাল, পানি নীল, মাটি সবুজ ও বাদামি এবং বাতাসকে ধূসর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই রংগুলোই তাঁরা নানা বিন্যাস ও নকশায় এবারের ঈদের পেশাকে ব্যবহার করেছেন। ফলে আলাদা নান্দনিকতা পেয়েছে তাঁদের পোশাকে। ছোটদের সুতির কামিজ, থ্রি–পিস, ফ্রকের দাম ৬৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা এবং ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়ার দাম ৫৫০ টাকা থেকে শুরু।

কে-ক্র্যাফটের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিনের কাছে জানা গেল, তাঁরা এবার মা–বাবা, ছেলে-মেয়ের জন্য বিশেষ ‘কম্ব সেট’ এনেছেন। এতে শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, থ্রি–পিস ও ফ্রক থাকবে। চারজনের জন্য সেটের দাম পড়বে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

শিশুদের হাল ফ্যাশনের নতুন পোশাকের প্রচুর সম্ভার থাকে নয়াপল্টনের গাজী ভবন, সিটি হার্ট এসব বড় বিপণিবিতানে। নন্দীপাড়া থেকে ব্যবসায়ী আবু বকর তাঁর স্ত্রী আর আড়াই বছরের মেয়ে সাফা তাসনিমকে নিয়ে এসেছিলেন গাজী ভবনে কেনাকাটা করতে। মেয়ের জন্য জর্জেট কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি ও লেইসের নকশা করা চীনের তৈরি একটি পার্টি ফ্রক কেনার জন্য দরদাম করছিলেন। আড়াই হাজার টাকা দাম চেয়েছিলেন জে এস ট্রেডসের বিক্রয় ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। ক্রেতার কাছে দাম বেশ চড়া মনে হয়েছিল। তবে পছন্দ হওয়ায় দরদাম করে শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ টাকায় পোশাকটি কিনলেন তিনি। বিক্রেতারা জানালেন, চীনের পোশাকগুলো সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। ভারতের পোশাকের দাম এবার আরও বেশি। বয়সভেদে দাম নির্ভর করে। এখানে ডি আর ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন জানালেন, ভারতের তৈরি বাচ্চাদের পোশাকগুলো ঈদে বেশ চলে। রং, ডিজাইনে নতুনত্ব থাকে। তবে এবার দাম এত চড়া যে তাঁদের নিজেদেরই দাম বলতে অস্বস্তি লাগছে। বেশি দরদাম করার সুযোগ নেই, খুব সামান্য লাভ হলেই বিক্রি করছেন।

বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিক্রেতারা আশা করছেন, আগামীকাল শুক্রবার নাগাদ ঈদের বাজার বেশ জমে উঠবে।