Thank you for trying Sticky AMP!!

উদীচীর প্রয়াত নেতা গোলাম মোহাম্মদ ইদুর স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ১২ জানুয়ারি

‘পঞ্চাশের দশকের গণজাগরণের প্রতীক ইদু ভাই’

মানুষের সংগ্রাম–লড়াইয়ে নিজেকে যুক্ত করে কোনোদিন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি গোলাম মোহাম্মদ ইদু। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যে সাধারণ জীবনযাপন আর প্রগতিশীল মনোভাব ধারণ করে গেছেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর প্রয়াত নেতা গোলাম মোহাম্মদ ইদুর স্মরণ আয়োজিত আলোচনায় তাঁর সম্পর্কে এসব কথা বলা হয়।

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার বিকেলে শোকসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মরণ অনুষ্ঠান। গোলাম মোহাম্মদ ইদুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি গবেষক মফিদুল হক বলেন, ‘শহীদ মিনারে এই আয়োজন হলো গোলাম মোহাম্মদ ইদুর স্মরণে নাগরিক স্বীকৃতি। তাঁর জীবন নিয়ে নানাভাবে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমার স্মৃতিতে ইদু ভাই আর একটি সাইকেল অবিচ্ছেদ্য। সব সময় তিনি সেই সাইকেল ব্যবহার করতেন।’ মফিদুল হক আরও বলেন ‘ গোলাম মুহম্মদ ইদু ছিলেন সত্যেন সেনের হাতে গড়া সাক্ষাৎ উত্তরসূরি। পঞ্চাশের দশকে যে একটি গণজাগরণ তৈরি হয়েছিল, তাঁরই প্রতীক হচ্ছেন একজন ইদু। গোটা সমাজকে নিয়ে জেগে ওঠার তাগিদে আজীবন একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন তিনি।’

সদ্য প্রয়াত উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদুর বড় সন্তান আনিসুল করিম বাবার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন,  ‘কোনো দিন বাবাকে আমরা ভেঙে পড়তে দেখেননি। চিন্তুা ও প্রগতিশীলতাই ছিল তাঁর আচরণের মূল বৈশিষ্ট্য।’  সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন ‘নিজের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি ইদু ভাই। সভাপতি অনেকেই হয়, কিন্তু গোলাম মুহম্মদ ইদু অথবা একজন ফয়েজ আহমদ সবাই হতে পারে না।’

সংস্কৃতিজন ম হামিদের বক্তব্যে উঠে আসে, আগামী প্রজন্মের জন্য গোলাম মোহাম্মদ ইদুর মতো মানুষদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার গুরুত্বের কথা।  প্রয়াত এই নেতা আজীবন যে সাধারণ যাপন আর প্রগতিশীল মনোভাব ধারণ করে গিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উদীচীর প্রয়াত নেতা গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ১২ জানুয়ারি

ছড়াকার আখতার হুসেন বলেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদুর বিচিত্র জীবনের নানা গল্প। তিনি বলেন, দেশের আন্দোলনের প্রতিটি বাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত এই সাহসী মানুষকে।

এ ছাড়াও স্মরণ অনুষ্ঠানে এ পর্বে আরও আলোচনা করেন সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা আবদুল মালেক, উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমসহ অন্যরা। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে প্রয়াত গোলাম মোহাম্মদ ইদুর পছন্দের গান ও কবিতা পরিবেশন করেন উদীচী এবং আমন্ত্রিত শিল্পীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও প্রায় এক দশক আগে শিল্পী-সংগ্রামী-কৃষক নেতা সত্যেন সেন একটি গানের দল গঠন করেন। সেই গানের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। পরে ১৯৬৮ সালে উদীচী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে গোলাম মোহাম্মদ ইদু প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। গত ২২ ডিসেম্বর মারা যান গোলাম মোহাম্মদ ইদু।