Thank you for trying Sticky AMP!!

মকবুল মর্গে কেন, জানতে চান স্ত্রী

স্বামীর মৃত্যুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী হালিমা বেগম

‘আমার স্বামী রাজনীতি করে না। আমাদের দুবেলা ভাত জোটাতে ঘাম ছুটে যায়।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা বেগম। মকবুলের নিথর দেহ যখন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা, স্ত্রী তখন মর্গের সামনে বিলাপ করছিলেন।

শোকে বিহ্বল হালিমার সঙ্গে কথা হয় মর্গের সামনে। জানালেন, ১০ বছর আগে ভালোবেসে হালিমা ও মকবুল বিয়ে করেছিলেন। নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে যাওয়ার কথা ছিল না মকবুলের। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জুতার নকশার কাজ করতেন মকবুল হোসেন। ছোটখাটো এই ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন স্ত্রীও। এই ব্যবসার কাজেই সাভার যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

Also Read: নয়াপল্টনে বিএনপি–পুলিশ সংঘর্ষ, নিহত ১

‘ও মিথিলা মা, তোমার আব্বু আর কোনো দিন তোমাকে আম্মু বলে ডাকবে না। তোমার জন্য আর ভালো ভালো খাবার আনবে না।’
মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা বেগম

মকবুলের বড় ভাই আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিরপুর বাউনিয়াবাঁধ এলাকায় থাকি। আমি যত দূর জানি, মকবুল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে বিএনপিকে সাপোর্ট করত। মকবুল কেন নয়াপল্টনে এল, তা বুঝতে পারছি না।’

এদিকে আবদুর রহমান যখন কথা বলছিলেন, তখন বিলাপ করছিলেন হালিমা। একমাত্র সন্তান মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠেন, ‘ও মিথিলা মা, তোমার আব্বু আর কোনো দিন তোমাকে আম্মু বলে ডাকবে না। তোমার জন্য আর ভালো ভালো খাবার আনবে না।’

ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে কথা হয় মকবুলের বড় বোন আয়েশার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা বড় বড় মানুষ, আমার ভাইটারে একবার দেখে যাও। আমার ভাই সেই সকাল আটটায় ঘর থেকে বের হয়েছিল। আমরা গরিব মানুষ। রাজনীতি বুঝি না, পেটনীতি বুঝি।’ জানা গেল, কারখানার পণ্য কিনতে স্ত্রীর বড় বোনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার করেছিলেন মকবুল। ‘কিন্তু আমার ভাই ক্যামনে নয়াপল্টনে গেল? ক্যামনে আমার ভাইয়ের প্রাণপাখি বের হয়ে গেল? ও মকবুল, তোর মিথিলার কী হবে’—বিলাপ করছিলেন আয়েশা।

Also Read: এবার বিএনপি নেতা আমান, সালাম ও খায়রুল আটক

নয়াপল্টনে নিহত মকবুল হোসেন
বাসার কাছে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন জুতার চামড়ার ওপরে নকশার কাজ। এই কাজ করে যে আয়, তা দিয়ে কোনোরকম খেয়ে–পরে থাকতেন। আট বছর আগে একমাত্র সন্তান মিথিলার জন্ম হয়।

মা আর ফুফুর বিলাপ শুনে আট বছরের ছোট্ট মিথিলার চোখ ছলছল। খানিক পরে ফুফু আয়েশার হাত ধরে মর্গের ভেতর বাবার নিথর দেহ দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে ওঠে—‘আব্বু, ও আব্বু...।’

এ সময় মকবুলের স্ত্রী হালিমার মুঠোফোনে কল আসে। মুঠোফোনের অপর পাশে যিনি ছিলেন, তাঁকে হালিমা বলেন, ‘আপনি আমার এত বড় ক্ষতি কেন করলেন? আমার মেয়ে এতিম হয়ে গেল।’

হালিমা কার সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেটি বলেননি। হালিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারা আমার মেয়েকে এতিম করল, আমাকে বিধবা করল, আমি জানতে চাই? আমি বিচার চাই।’ অনেক কষ্ট করে এই ঢাকা শহরে টিকে ছিলেন বলে জানান হালিমা। বলেন, ‘আমার স্বামী সাভার যাবে ভেবেছিলাম। মালিকের হাতে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে রাতে বাসায় ফিরবে। কিন্তু বিকেলে কেউ একজন বলল, তোমার মকবুল মারা গেছে।’

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বসে পড়লেন ফখরুল, আটক এ্যানি ও শিমুল বিশ্বাস

নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারে জন্ম মকবুল হোসেনের। মকবুলের বাবার নাম আবদুস সামাদ। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের কাদিমচর। অভাবের সংসারে ভাগ্য ফেরানোর আশায় মুক্তিযুদ্ধের আগে ঢাকায় আসেন তিনি। থাকতেন ভাষানটেক বস্তিতে। রিকশা চালাতেন তিনি। মকবুলের জন্মও ভাষানটেকে। তাঁর স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে চাকরি করবেন।

উচ্চমাধ্যমিক পড়ার পর লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় মকবুলের। পরে কাজ নেন একটি পোশাক কারখানায়। ১৫ বছর আগে জুতার নকশার কাজ শেখেন তিনি। ১০ বছর আগে বিয়ে করেন হালিমাকে। দুজন মিরপুরের বাউনিয়াবাঁধের নিউ শেড কলোনিতে ঘর ভাড়া করে থাকেন। বাসার কাছে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন জুতার চামড়ার ওপরে নকশার কাজ। এই কাজ করে যে আয়, তা দিয়ে কোনোরকম খেয়ে–পরে থাকতেন। আট বছর আগে একমাত্র সন্তান মিথিলার জন্ম হয়।

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান শুরু

দুজন মিলে যে জীবনযুদ্ধ শুরু করেছিলেন হালিমা বেগম, তা যেন হঠাৎ থমকে গেছে। হালিমা বলেন, ‘আমার সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল। হে আল্লাহ, তুমি আমার মিথিলাকে কেন এতিম করলে? আমি এখন কীভাবে বেঁচে থাকব।’

রাত নয়টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। তখনো বিলাপ চলছে। মকবুলের মরদেহ পেতে অপেক্ষায় স্বজনেরা।

Also Read: সরে গেলেন ফখরুল, বললেন—‘কার্যালয়ের ভেতরে বিস্ফোরক নিয়ে গেছে পুলিশ’