Thank you for trying Sticky AMP!!

‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে গল্প ফাঁদার চেষ্টা করবেন না’

সাগর–রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংবাদিক নেতারা

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, খুনের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু ৯৫ হাজারের বেশি ঘণ্টা পার হলেও তদন্তই শেষ হয়নি। সাগর-রুনির খুনের বিচার ৪৮ বছরেও শেষ হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে সাংবাদিক সমাজ।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী মেহেরুন রুনি। বহুল আলোচিত এই খুনের মামলা তদন্ত করছে র‍্যাব। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৯৫ বার আদালতের কাছে সময় নিয়েছে র‍্যাব।

সাগর-রুনি খুনের মামলার তদন্তে বিলম্বের বিষয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এই ১১ বছর আমাদের সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে খেলাধুলা হয়েছে রাষ্ট্রের দিক থেকে, যেভাবে বিব্রত ও বিভ্রান্ত করা হয়েছে, আমি হতাশ। আমার মতো সাংবাদিক ভাইরাও কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, আমরা যতই আন্দোলন করি, এর কোনো সুরাহা হবে না; খুনিরা ধরা পড়বে না। রাষ্ট্র যেদিকে চলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেদিকে চলছে। সেদিকেই যাবে। শেষ পর্যন্ত ফল শূন্য হবে। তবে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলতে চাই, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো ধরনের গল্প ফাঁদার চেষ্টা করবেন না।’

র‍্যাবের উদ্দেশে সাংবাদিক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘র‍্যাব কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে কোনো ধরনের গল্প ফেঁদে যদি এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে র‍্যাবের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজের লড়াই শুরু হবে। আপনারা যদি এলিট ফোর্সই হয়ে থাকেন, তাহলে কি এলিট ফোর্স একটি ঘটনার তদন্ত করতে ৯৫ বার সময় নেয়। কেউ কি এটা বিশ্বাস করবেন, আপনারা এটি করতে পারছেন না। সবাই ধরে নিয়েছেন, আপনাদের এটি তদন্ত করার সদিচ্ছা নেই। রাষ্ট্র ধরে নিচ্ছে, সাংবাদিক হত্যা হলে আর কী হবে; সাংবাদিকই তো।’

সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া অধিকাংশ সাংবাদিক নেতা অভিযোগ করেন, সাগর-রুনির খুনের বিচার না হওয়ার কারণে আরও অনেক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

সমাবেশে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘আমরা আর কতকাল সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য অপেক্ষা করব। আর কতকাল সময় দেব? যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়, হচ্ছে—আমরা দেখেছি। কিন্তু সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না।’

Also Read: সাগর-রুনি খুনের রহস্য উন্মোচিত হোক, আমরাও চাই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে মুরসালিন নোমানী  বলেন, ‘অতীতেও আমরা সাংবাদিক সমাজ এক হয়ে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন করছি। যত দিন এই খুনের তদন্ত ও বিচার শেষ না হবে, তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘১১ বছরে র‍্যাব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৯৫ বার সময় নিয়েছে। বিচার তো অনেক দূরের কথা। সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না। আমি জানি না, সাংবাদিক খুনের মিছিল কত বড় হবে, কবে সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে।’

Also Read: ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাইবেন না, রেহাই পাবেন’

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সাংবাদিক নেতারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিআরইউর সহসভাপতি দিপু সারোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক মঈনুল হাসান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কিরন শেখ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মাজহারুল হক মান্না, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।