Thank you for trying Sticky AMP!!

প্লটমালিকের ‘আবদারে’ নির্মাণকাজ বন্ধ

পাশের একটি প্লটের মালিক উত্তর সিটির মেয়রের কাছে আবেদনজানালে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

  • ১ আগস্ট পদচারী–সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুর ভিত্তি স্থাপনে মাটি খোঁড়া হয়েছে।

  • আবার কাজ শুরুর বিষয়ে ডিএনসিসি সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সিটি করপোরেশনের নতুন একটি পদচারী সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ওই জায়গায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। গত মঙ্গলবার কুড়িল চৌরাস্তা এলাকায়।

রাজধানীর প্রগতি সরণির কুড়িল চৌরাস্তায় নতুন একটি পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে কাজ শুরুর দেড় মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ।

মেয়রের কাছে পাশের একটি প্লটের মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গেছে। তবে আবেদন পেলেও কাজ বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানান মেয়র।

‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুড়িল এলাকায় পদচারী–সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। গত জানুয়ারিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাইশা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজটি দেওয়া হয়। গত ১ আগস্টে পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

মাইশা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়ক (কো-অর্ডিনেটর) মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাজ শুরুর পরেই পাশের প্লটের লোকজন আপত্তি জানায়। বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানো হলে তারা আর কাজ করার অনুমতি দেয়নি।

কাজ বন্ধের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশলীরাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর ভিত্তি স্থাপনে মাটি খোঁড়া হয়েছিল। এরই মধ্যে সিনহা ফ্যাশনস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেতুটি স্থানান্তরে মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে আবেদন জানায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রগতি সরণির কুড়িল চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে পূর্ব পাশে সড়কের আংশিক ও ফুটপাত টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। বেষ্টনীর ভেতরে ফুটপাতের জায়গায় গর্ত খোঁড়া। পাশে নতুন পদচারী–সেতু নির্মাণের তথ্যসংবলিত একটি সাইনবোর্ড।

পাশের দোকানিরা বলেন, মাসখানেক আগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে দুই সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ।

কুড়িল মেম্বারবাড়ির বাসিন্দা ইকবাল করিমের অভিযোগ, পাশের খালি প্লটের মালিক এক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের  ভালো সম্পর্ক। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ করেন।

পদচারী–সেতুর খুঁটির জন্য যেখানে খোঁড়া হয়েছিল, সেখান থেকে সিনহা ফ্যাশনসের প্লটের প্রবেশপথ কিছুটা দূরে। ওই প্লটে তিনটি বেসমেন্টসহ ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ হয়নি বলে প্লটটি এখনো খালি পড়ে আছে।

আপত্তির বিষয়ে সিনহা ফ্যাশনসের মালিক আরিফুর রহমানের বক্তব্য জানতে তৈরি তাঁর মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

ঢাকা উত্তর সিটির ট্রাফিক প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা বলেন, যেখানে পদচারী–সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার পাশের জমিটা অন্য এক মালিকের। এর পেছনের জায়গাটি সিনহা ফ্যাশনসের খালি প্লট। ওই প্লটের প্রবেশমুখ নির্মাণাধীন পদচারী–সেতু থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে।

দুই পাশের ছয় এলাকার মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত

কুড়িল চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে জোয়ারসাহারা, শেওড়া ও অলিপাড়া এলাকা। পূর্ব পাশে কুড়িল মেম্বারবাড়ি, ঘাটপাড়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। দুই পাশের এলাকায় যাতায়াতের দুটি অভ্যন্তরীণ সড়ক রয়েছে। ওই অংশে দুই পাশের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ততম বিশ্বরোড পার হতে হয়।

পদচারী–সেতুর কাজ বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জানেন না স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন সেতুর পাশের জায়গাটি তাঁর আপন ছোট ভাইয়ের। এলাকাবাসীর স্বার্থে সেতু নির্মাণ নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর সিনহা ফ্যাশনস লিমিটেডের পক্ষ থেকে মেয়র  বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়।

মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি, কিন্তু কাজ বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যেখানেই পদচারী–সেতু করতে যাই, সেখানেই এমন হাজারটা চিঠি আসে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘নির্মাণকাজ কারও না কারও জমির সামনে পড়বেই। আমরা দেখব জনগণের সুবিধা। প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’