Thank you for trying Sticky AMP!!

হাইকোর্ট

ঢাকা মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করতে নির্দেশ

ঢাকা মহানগরে বিদ্যমান সব পার্ক ও খেলার মাঠের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, অনতিবিলম্বে পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং বিদ্যমান পার্ক–খেলার মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর নির্দেশনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন। ঢাকা শহরের সকল খেলার মাঠ ও পার্কগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গত মাসে ওই রিটটি করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধূরী, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) আয়তনবিশিষ্ট রাজধানী ঢাকা মহানগরী ১৬ মিলিয়ন (১ কোটি ৬০ লাখ) মানুষের আবাসভূমি। অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত প্রসারিত মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা অন্যতম।

অপরিকল্পিত নগরায়ন গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি। নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় দুই সিটি করপোরেশনে খেলার মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৫টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে যে, ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলশ্রুতিতে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা উদ্যান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ৬টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার।

ফলশ্রুতিতে নাগরিকেরা নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে ও সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পরে বেলার আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, রুলে জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, পার্ক ও খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রস্তাবনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, শ্রেণি পরিবর্তন ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধ এবং বিদ্যমান সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পরিবেশ সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, রাজউক চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বেলার আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না।