Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার যানজট, প্রিয় বউ এবং অন্যান্য

আজ বনানী

তখনো ইফতারে প্রায় এক ঘণ্টা বাকি। সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু চাইলেই তো যাওয়া যায় না। ট্রাফিক জ্যাম বা যানজট বলে কথা। এই যানজটে অনেকের কাছেই সময় কাটানোর ভালো উপায় সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুকে চোখ রাখতেই বোঝা গেল, আজকের যানজট যথেষ্ট তীব্র। সেই তীব্র যানজটে যাঁরা রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন, তাঁরা তখন কী কী করেছেন, সেটাই বরং দেখা যাক।

ফয়সাল আকরাম ইথার গুগল ম্যাপের একটি স্ক্রিনশট দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, পুরো রাস্তা লাল হয়ে আছে; অর্থাৎ সর্বত্রই তীব্র যানজট। তারপর তিনি নিজের স্ত্রীকে ট্যাগ করে লিখেছেন:

প্রিয় বউ,
তুমি আর আমায়া (কন্যার নাম) ইফতার করে নিয়ো। ঢাকার রাস্তার লাল সুতা বের হয়ে গেছে। আমার আসতে দেরি হবে। সাহ্‌রির সময় যদি পৌঁছাতে পারি, তাহলে তোমাদের ডেকে দেব নে। যদিও সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আরও দেরি হতে পারে। যদি দেরি হয়ে যায়, তাহলে আমায়াকে দেখে রেখো, ওকে স্কুলে ভর্তি করাইও, ভার্সিটিতে যে সাবজেক্ট ওর ভালো লাগে, পড়তে দিয়ো। পড়ালেখার জন্য চাপ দিয়ো না। আর হ্যাঁ, ওকে বিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। আমি ওর কনভোকেশনের আগে আসার চেষ্টা করছি। আমার দেরি দেখে তুমি আর কারও সঙ্গে ভেগে যেয়ো না।
ইতি
তোমার স্বামী
ইথার

ফেসবুকে ট্র্যাফিক অ্যালার্ট নামে একটা গ্রুপ আছে, যার সদস্য প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার। সেখানে ঢুঁ মারতেই যানজটের ভয়াবহতা ভালোভাবে টের পাওয়া গেল।

সেখানে ওমর জিলু নামের একজন লিখেছেন,

‘এবার শুক্রবার ছাড়া মে বি আর বাসায় ইফতারি করা সম্ভব নয়। ঢাকার ট্রাফিক একটা আতঙ্কের নাম।’

সুদীপ্ত টি অর্ণব গ্রুপে লিখেছেন,

‘স্কয়ার হাসপাতাল থেকে রওনা দিয়েছি ৪টা ৫০-এ। যাচ্ছি গুলশান নিকেতন। পৌঁছানোর প্রত্যাশিত সময় রাত আটটা। তবে গুগল ম্যাপ দেখার পর আমি সমস্ত আশা হারিয়েছি।’

তৌফিক চৌধুরী রনি প্রশ্ন করেছেন,

‘মেট্রোরেলে করে যাঁরা সকালে উত্তরা থেকে আগারগাঁও আসবেন, তাঁরা বিকেলে ফিরবেন কীভাবে। বিকেলে মেট্রোরেল বন্ধ রাখার যুক্তি কী?’

কঠিন যানজটে পড়েও কেউ কেউ রসিকতা করার সুযোগ ছাড়েননি। যেমন এ বিষয়ে মন্তব্য করে খালেদ ওমর ফোরকান লিখেছেন,

‘সকালে যে আরাম করে আসছে, বিকেলে সেটা ফিল করা।’

রসিকতার সুরেই একইভাবে মাজহার তালুকদার নামের একজন লিখেছেন,

‘সবাই শুধু নেগেটিভ নিয়ে বসে আছেন, একটু পজেটিভলি চিন্তা করেন। এই জ্যামের কারণে সবাই এক কাতারে—প্রাইভেট কার, রিকশা, সিএনজি, বাস, বাইক—সবাই। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু জ্যামের কল্যাণে।’

এ ক্ষেত্রে মন্তব্যও এসেছে প্রায় একই সুরে। মো. টিপু চৌধুরী লিখেছেন,

‘জ্যামে থাকলে কত প্রগতিশীল চিন্তা করা যায়।’

আর তানভীর আহমেদ রাহাত মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন,

‘এই জ্যামের কারণে আজ সবাই এক কাতারে—সমতার এই স্বপ্ন একজন দেখেছিল, যা ইদানীং প্রতিনিয়ত পূরণ হচ্ছে।’

সাজেদুল ইসলাম শুভ্র নামের একজন আবারও পুরো লাল রঙের ঢাকার রাস্তার গুগল ম্যাপ সংযুক্ত করে লিখেছেন,

‘সবুজের বুকে লাল, সে তো থাকবেই চিরকাল।’

জিসান আনোয়ার চৌধুরী আবারও মেট্রোরেলের প্রসঙ্গ এনে লিখেছেন,

‘উন্নয়নের “শো পিছ’ হিসেবে মেট্রোরেলকে এখন জাদুঘরে রাখা যেতে পারে।’

রাজীব আহমেদ নামের একজন অন্য একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,

‘কেউ খেয়াল করেছেন, গুলশান-১ থেকে মহাখালী যাওয়ার রাইটটার্নটা খোলা। সব সময় কিন্তু বন্ধ থাকে। যে কেউ মনে করতেই পারেন, রোজা উপলক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে। আপনি তা মনে করে যেই না রাইটটার্ন নেবেন, ডিসিসি মার্কেটে ঘাপটি মেরে থাকা জনগণের বন্ধু এসে আপনার লাইসেন্স দেখতে চাইবে। পরে যা ঘটার তা ঘটবে (বুঝে নিন)। প্রতি রমজানে এই ফাঁদ পাতা হয়। এই পর্যন্ত ওইখানে কে কে লাইসেন্স চেক করিয়েছেন?’

Also Read: রাজধানীতে তীব্র যানজট, তিন কারণ জানাল ট্রাফিক পুলিশ

সর্বশেষ ইফতারের ঠিক আগে আগে মুহাম্মদ হাবিবুর পরিস্থিতির একধরনের সমাধান দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,

‘রাস্তায় যাঁরা জ্যামে আছেন, সবাই গাড়ি বন্ধ করে দিন। একত্রে ৫, ৬ বা ৭ জন হয়ে যাঁর যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে ইফতার করুন, জ্যামে একটু একটু আগানোর চেয়ে শান্তিমতো ইফতার ও নামাজ পড়ে তারপরই গাড়ি স্টার্ট দিন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন, আপনাদের ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন।’

এরপর ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপ ইফতার পর্যন্ত চুপ। জানি না, হয়তো মুহাম্মদ হাবিবুরের পরামর্শ মেনে গাড়ি বন্ধ করে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

(পুরো লেখাতেই প্রথম আলোর বানান রীতি অনুসরণ করা হয়েছে।)