Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৬ মাসে আয় কত, টোল বাড়াতে চায় কোম্পানি

মোমিনুল আবেদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁর অফিস রাজধানীর মতিঝিলে। তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তখন থেকে মোমিনুল আবেদিন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করছেন।

মোমিনুল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, আগে তিনি গাড়ি নিয়ে বাড্ডা হয়ে মতিঝিল যেতেন। সকাল সোয়া আটটায় রওনা দিয়ে অফিসে পৌঁছাতে তাঁর পৌনে ১০টা বেজে যেত। এখন তিনি একই সময় বাসা থেকে বের হয়ে কুড়িল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে তেজগাঁও নামেন। এরপর ফার্মগেট হয়ে মতিঝিলের অফিসে পৌঁছান সকাল সোয়া ৯টার মধ্যে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে টোল আদায়ের পরিমাণ।

নির্বাহক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেডের তথ্যমতে, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির ২১ দিন (১ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি) দিনে গড়ে ৪২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। দিনে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর মাসে (সেপ্টেম্বর) দিনে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। দিনে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (৩ টনের কম) ক্ষেত্রে টোল ৮০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা তার বেশি) টোল ১৬০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের (৬ চাকা পর্যন্ত) টোল ৩২০ টাকা। ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য টোল ৪০০ টাকা।

এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল ও টোল আদায় বাড়লেও তা এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ের নয় বলে মনে করছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এফডিইই। প্রতিষ্ঠানটির মতে, দিনে গড়ে ৫০ হাজার যানবাহন চলাচল করলে কাঙ্ক্ষিত আয় হবে। এ অবস্থায় তারা টোল বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সরকারকে দিতে চায়।

এদিকে ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) এক্সপ্রেসওয়ের টোল বুথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি কমাতে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি স্থাপন করতে এফডিইইকে চিঠি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় এই প্রকল্পের নাম ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’। প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, এফডিইই কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১ শতাংশ শেয়ার), চীনভিত্তিক চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪ শতাংশ শেয়ার) ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড (১৫ শতাংশ শেয়ার)। এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

Also Read: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যাংকঋণ বন্ধ, শেয়ার নিয়েও দ্বন্দ্ব

৬ মাসে যত আয়

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও এফডিইই কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুসারে, চালুর প্রথম মাসে (সেপ্টেম্বর) ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৭টি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেছে। টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসে সোয়া ৯ লাখ যানবাহন থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়। নভেম্বরে টানা হরতাল-অবরোধের কারণে যান চলাচল ও টোল আদায় কমে যায়। নভেম্বরে ৮ লাখের বেশি যানবাহন থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়। ডিসেম্বরে ১০ লাখ ৭০ হাজারের বেশি যানবাহন থেকে পৌনে ৯ কোটি টাকা টোল আদায় হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১১ লাখের বেশি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ৯ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে দিনে গড়ে চলাচল করেছে প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার গাড়ি। ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৪২ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এই এক্সপ্রেসওয়ের পথ হলো—হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী।

গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ (সাড়ে ১১ কিলোমিটার) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই অংশে যানচলাচল শুরু হয়।

চুক্তি অনুসারে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়ন, নির্মাণকাজের অর্থ জোগাড় ও উড়ালসড়ক চালুর পর তা পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ২৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকারের কাছে উড়ালসড়কটি হস্তান্তর করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এর আগে তারা টোল আদায় করে বিনিয়োগ করা অর্থ সুদাসলে তুলে নেবে।

বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, উড়ালসড়ক দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয়। আর সর্বনিম্ন যানবাহন চলাচল করতে পারে সাড়ে ১৩ হাজার। ৮০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করলে বাড়তি যে টোল আদায় হবে, এর ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে।

সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক চালু করতে বাধ্য হয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় দিনে অন্তত ৫০ হাজার যানবাহন চললে কাঙ্ক্ষিত আয় হবে বলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ধারণা।

এক্সপ্রেসওয়ের টোল বুথ

Also Read: ২৫ বছর পর মালিকানা পাবে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, আংশিক চালুর ক্ষেত্রে সরকারকে কত বছর পর এক্সপ্রেসওয়ে হস্তান্তর করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। চুক্তিতে বলা আছে, একটানা ১৫ দিন দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৩ হাজারের কম যানবাহন চলাচল করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিনিয়োগকারীকে চুক্তির চেয়ে বাড়তি সময় টোল আদায়ের সুযোগ দিতে হবে। তবে সে রকম পরিস্থিতি এখনো হয়নি। যানবাহন চলাচল বাড়ছে। টোল আদায়ও বাড়ছে।

এদিকে ৮০ টাকা টোলকে যথেষ্ট বলে মনে করছেন না এফডিইইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভাস্কন খান্নাভা। ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর কার্যালয়ে বসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকজন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে খুশি। এ কারণে আমরাও খুশি। তবে বড় বিনিয়োগের এই প্রকল্পে টোল আদায় আরও বেশি হতে হবে। সময়ের মূল্য অনেক বেশি। যাঁরা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন, তাঁরা সেটা উপলব্ধি করতে পারছেন। তাঁরা বেশি টোল দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন।’

ভাস্কন খান্নাভা আরও বলেন, শুরুতে সর্বনিম্ন টোল ১৫০ টাকা ধরা হয়েছিল। সরকার আপত্তি করায় তাঁরা সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা করেছেন। টোল বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। এই প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁরা সেতু কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। টোল বাড়ানোর একটি প্রস্তাব তাঁরা সরকারকে দিতে চান। তবে কোনো লিখিত প্রস্তাব এখনো পাঠানো হয়নি।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

Also Read: ঢাকা উড়ালসড়কে কোথা দিয়ে উঠবেন, কোথায় নামবেন, খরচ কত

কোন ধরনের গাড়ি বেশি

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও এফডিইইর তথ্য অনুসারে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, জিপ, এসইউভি, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম)। পিকআপ চলাচল করেছে প্রায় ৬ হাজার। ৬ চাকার ট্রাক চলাচল করেছে মাত্র ১৯১টি। ৬ চাকার বেশি কোনো ট্রাক এখন পর্যন্ত চলাচল করেনি। বিআরটিসিসহ কিছু বেসরকারি মালিকানাধীন বাস চলাচল করেছে। এর হার দেড় শতাংশের বেশি।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

Also Read: ঢাকা উড়ালসড়কে যে কারণে নিষিদ্ধ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল

ইটিসি স্থাপনে চিঠি

সকাল ও বিকেলের কর্মব্যস্ত সময়ে এক্সপ্রেসওয়ের টোল বুথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আগামী দুই মাসের মধ্যে টোল বুথে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি স্থাপনে এফডিইইকে চিঠি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

১২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প পরিচালকের সই করা এক চিঠিতে ইটিসি স্থাপনের এই তাগিদ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, শুরু থেকেই ইটিসি স্থাপনের কথা। কিন্তু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তা স্থাপন করছে না। কর্মব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) তেজগাঁও ও বিমানবন্দর এলাকায় টোল বুথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এতে এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ মনোভাব দেখা দেবে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ইটিসি স্থাপন করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

তবে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের ব্যাংকঋণ ছাড় না হওয়া এবং শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এফডিইইর পক্ষে ইটিসি স্থাপন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা।

Also Read: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে কী হবে