Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালো কাজের ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রত্যয়

প্রথম আলো বন্ধুসভার রজতজয়ন্তী উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রমে পুরস্কার বিজয়ী বন্ধুরা। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে

প্রথম আলোর সঙ্গে লাখ লাখ পাঠক তো প্রতিনিয়ত আছেনই। আরও আছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। ২৫ বছর ধরে বন্ধুসভা প্রথম আলোর প্রতিটি মানবিক, সামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতির কর্মসূচিগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের সহযোগী হিসেবে অনন্য উদ্যমী ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রথম আলোর সঙ্গে বন্ধুসভারও যাত্রা শুরু হয়েছিল একই সময়ে।

গতকাল শনিবার সারা দেশের নতুন পুরোনো বন্ধুরা উদ্‌যাপন করলেন রজতজয়ন্তীর উৎসব। এ আনন্দঘন উৎসবে গত ২৫ বছরে দুর্যোগে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানোসহ ভালো কাজে অংশ নিয়ে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করার গৌরবকে মনে রেখে আগামী দিনে আরও মানবিক ও সমাজ উন্নয়নের কাজে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় জানালেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।

রজতজয়ন্তীর এ উৎসবে সহায়তা দিয়েছে আরণ্যক ফাউন্ডেশন, ইস্পাহানি টি লিমিটেড, রেজুভা ওয়েলনেস, চরকি, ফ্রেশ, এমব্রেলা লিমিটেড, গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড, কোডার্স ট্রাস্ট ও টুয়েলভ ক্লদিং লিমিটেড।

রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে হেমন্তের শেষ বেলায় রজতজয়ন্তীর উৎসবের সূচনা হয় বন্ধু অনীক সরকার, মেঘা খেতান, পৌলোমী অদিতি, সোলায়মান কবির, মাহমুদা তমা, মনিরা আক্তার ও বিভার পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত দিয়ে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি মৌসুমি মৌ ও সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক। সংগঠনের কার্যক্রম তুলে ধরেন সভাপতি উত্তম রায়। তিনি বলেন, দেশে এখন বন্ধুসভার ১৪১টি শাখা রয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখের মতো বন্ধু সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। এককভাবে এটি দেশের একটি অন্যতম প্রধান অরাজনৈতিক সংগঠন।

রজতজয়ন্তীর উৎসবে ঢাকার ২৩টিসহ দেশের ৩৩টি মিলে ৫৬টি শাখার চার শতাধিক বন্ধু অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিলেন বিভিন্ন সময় যাঁরা বন্ধুসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন বা যুক্ত ছিলেন এমন পুরোনো বন্ধুরা। তবে অনুষ্ঠানের সঞ্চালকেরা জানালেন বন্ধু কখনো পুরোনো হয় না। বন্ধু চিরকালই বন্ধু আর সেই বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নাচ, গান, স্মৃতিচারণা, কুইজে অংশ নিয়ে পুরস্কার জয় করা আর সেরা কাজের জন্য পুরস্কার জয়ের আনন্দে উৎসব হয়ে উঠেছিল জমজমাট। আর উৎসবকে আরও দ্যুতিময় করে তুলেছিল দেশের সংস্কৃতি ও বিনোদনজগতের তারকাদের উপস্থিতি।

বন্ধুসভার বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে মঞ্চে এসেছিলেন অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনয়শিল্পী আবদুন নূর সজল। ‘চার ছক্কা হই হই’ গানটি গেয়েছেন বাঁধন সরকার পূজা।

অনুষ্ঠানে আলোচনা, স্মৃতিচারণার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁদের পরিবেশনা দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। ‘সখী শিমুল তুলার বালিশে’ গানের সঙ্গে নৃত্য করেছেন রংপুরের যমজ বোন বর্ষা ও বৃষ্টি। মাহমুদা তমা গেয়েছেন ‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’, পৌলোমী অদিতি গেয়েছেন, ‘তোমার জন্য নিলচে তারা’, অর্পিতা রায় গেয়েছেন 'অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে' আর হৃদয় সৈকত গেয়েছেন 'আগে যদি জানতাম, মন ফিরে পাইতাম'। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ বন্ধু রিফাত একই সঙ্গে নারী ও পুরুষের ভূমিকায় ‘দিন যে কাটেনা’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশ করে সবাইকে চমকিত করেন। একক নৃত্য পরিবেশনায় আরও ছিলেন পারিশা মেহজাবিন ও সুপ্রিয়া শীল। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেছেন খাদিজা জান্নাত, শারমিন আরা, জয়তুন্নেসা কেয়া ও ওয়াসিমা তাসনিম। ‘ভেনট্রিলোকুইজম’ পরিবেশন করেন মানসুরা মুবাশ্বিরা।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও বন্ধুসভা পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা, সাহিত্যিক ও মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল বিজয়ী বন্ধুদের হাতে ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেন। এবার বন্ধুসভার তিনটি বিশেষ কর্মসূচিতে সেরা ১০টি শাখাকে পুরস্কার দেওয়া হয়। কর্মসূচিগুলো হলো সহমর্মিতা, বৃক্ষরোপণ ও সারা বছরের সেরা কার্যক্রম। এ ছাড়া প্রথম আলোর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী ভালো কাজের জন্য সেরা তিন বন্ধুসভাকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

আলোচনায় বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন বলেন, গত ২৫ বছরে বন্ধুসভায় যাঁরা যুক্ত ছিলেন, দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সেই বন্ধুদের একত্র করা গেলে এটি আরও বড় সংগঠন হবে। আরও বড় কাজ করা যাবে।

আনিসুল হক বলেন, বন্ধুসভা দেশের তরুণদের হৃদয়ে আলো জ্বালিয়েছে। বহু ভালো কাজ করেছে। এর ভেতর দিয়ে নেতৃত্ব গড়ে তুলেছে। এই মানুষ হারবে না। তাই বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে।

সম্পাদক মতিউর রহমান সবাইকে রজতজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বন্ধুসভা প্রথম আলোর একটি বড় শক্তি। প্রথম আলো সাংবাদিকতার বাইরেও সামাজিক সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণকর যত কার্যক্রম পরিচালনা করে, বড় বড় উদ্যোগ নেয়, বন্ধুসভার সহায়তা ছাড়া তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। এ ছাড়া বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজ উদ্যোগ দেশে দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। এসব কাজ সমাজ ও মানুষের উন্নয়নের পাশাপাশি বন্ধুদের নিজেদের জীবন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, তাঁর আশা, বন্ধুসভা ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন সংগঠন হিসেবে দাঁড়াবে। সমাজ ও দেশের উন্নয়নের কাজে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

নতুন–পুরোনো বন্ধুরা তাঁদের স্মৃতিচারণা করেন। বিজয়ীরা পুরস্কার হাতে অতিথিদের সঙ্গে ছবি তোলেন। আনন্দের এই উৎসব শেষ হয়েছিল বন্ধুদের পরিবেশনায় ছয়টি ঋতু নিয়ে জমকালো র‌্যাম্প শো দিয়ে।