Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় তৃতীয় ঢেউয়ের চূড়া পেরিয়েছে বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য। এ ছাড়া তিনি অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের সঙ্গে যুক্ত। দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, রোগীদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সামছুর রহমান

প্রশ্ন

তিন দিন ধরে শনাক্ত ১০ হাজারের কম। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের কম। সংক্রমণ কি কমে আসছে বলা যায়?

আবু জামিল ফয়সাল: দেশের করোনার অমিক্রণ ধরনের দাপটে সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। এখন সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী। শনাক্ত, শনাক্তের হার কমে আসছে। দেশে সামগ্রিকভাবে সংক্রমণ কমার দিকে, এটা বলাই যায়।

প্রশ্ন

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এটি দেশে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ। এই ঢেউয়ের চূড়া কি পেরিয়ে গেছে?

আবু জামিল ফয়সাল: দেশ সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের চূড়া পেরিয়ে এসেছে। সংক্রমণ এখন একটি স্থিতাবস্থায় রয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে সংক্রমণ আরও কমবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা এমনটাই বলে। চার থেকে ছয় সপ্তাহ রোগী বেড়েছে। এরপর পাঁচ-ছয় দিন স্থিতাবস্থায় থেকে সংক্রমণ কমে গেছে। বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন

এখন দেশে দুই লাখের বেশি চিকিৎসাধীন রোগী। যাঁদের ৯৯ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা কেমন?

আবু জামিল ফয়সাল: স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খোঁজই রাখছে। ৯৯ শতাংশ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও তাঁদের খোঁজ নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। অথচ পজিটিভ রোগী নাম, মোবাইল নম্বর—সবকিছুই আছে। বাড়িতে থাকা রোগীরা কেমন আছেন, কী ওষুধ খাচ্ছেন—কিছুই জানা যাচ্ছে না। সরকার বাড়িতে চিকিৎসাধীন রোগীর ক্ষেত্রে আরও পরিকল্পিতভাবে ভূমিকা রাখতে পারত।

প্রশ্ন

করোনার ডেলটা ধরনের তুলনায় অমিক্রনে মৃত্যু তুলনামূলক কম। কিন্তু অনেকেরই করোনা–পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা রয়ে যাচ্ছে। করোনা–পরবর্তী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের কার্যক্রম পর্যাপ্ত বলে মনে করেন কি?

আবু জামিল ফয়সাল: করোনা–পরবর্তী জটিলতা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। সারা পৃথিবীতেই দেখা যাচ্ছে, করোনা–পরবর্তী চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। কিছু হাসপাতালের বহির্বিভাগে করোনা–পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে করোনা–পরবর্তী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন

চলতি মাসে বইমেলা শুরু হবে। জনসমাগম হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে জনগণ শুরু থেকেই উদাসীন। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে কি?

আবু জামিল ফয়সাল: সরকার নামকাওয়াস্তে কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। সরকার এমন ভাব করছে, বিধিনিষেধ বললেই সবাই পালন করবে। বিধিনিষেধ মানানোর ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নেই। সমন্বিতভাবে কোনো কার্যক্রম নেয়নি। বিধিনিষেধ পালনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন। তাঁরাও এগিয়ে আসেননি। জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়নি, ফলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন। বইমেলার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জনগণকে সচেতন করা, বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন

দেশে করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ১০ কোটি মানুষ। তবে দুই ডোজ টিকার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ পিছিয়ে। দেশের টিকা কার্যক্রম কি সঠিক পথে এগোচ্ছে? যাঁরা এখনো নিবন্ধন করেননি তাঁদের টিকার আওতায় কীভাবে আনা যায়?

আবু জামিল ফয়সাল: করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থেকে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত টিকা থাকার পরেও লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছাতে না পারা দুঃখজনক। মানুষ টিকা নিতে আসছেন না, মানুষের কাছে যাওয়াও হচ্ছে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগে ঘাটতি অনেক। করোনা টিকার বিষয়ে সরকারের জোরালো কমিউনিকেশন ক্যাম্পেইন (প্রচার কার্যক্রম) নেওয়া জরুরি।