Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় নিরাপদ দেশ সুইজারল্যান্ড

Untitled-8

আমেরিকার বিখ্যাত ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন ৮ জুন একটি প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০০টি দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ডকে সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে জার্মানি দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের স্থান ৮৪তম।

১৬ মার্চ থেকে মূলত সুইজারল্যান্ডে লকডাউন শুরু হয়। প্রায় দুই মাস ছিল লকডাউনের চাদরে মোড়ানো। প্রথম থেকেই সুইস ফেডারেল সরকার অত্যন্ত দক্ষতা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ধাপে ধাপে সবকিছু উন্মুক্ত করা হয়।

১৯ জুন থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে করোনা মহামারিতে জারি করা আইন। সুইস সরকার লকডাউনের শুরু থেকেই জনগণের কাছে খোলামেলা উপস্থাপন করেছে সবকিছু, কী হতে যাচ্ছে, কী করতে হবে, কী হবে না। কখন কোনো হাসপাতালে যেতে হবে। জনগণও মানতে বাধ্য।

আমিও আগে প্রথম আলোর একটি লেখায় লিখেছিলাম, সুইস সরকার দুহাত উজাড় করে দিচ্ছে আর জনগণ নিচ্ছে। দেওয়া এবং নেওয়ার মধ্যে চমৎকার এক বোঝাপড়া যেন। নাগরিক যেমন সচেতন তাঁর অধিকার নিয়ে তেমনি সরকারও সচেষ্ট তার কর্তব্য নিয়ে। শহরাঞ্চল এবং দূরদূরান্তের গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসাসেবার মানের মধ্যে কোনো পার্থক্য এখানে নেই। ধনী, গরিব, জাতি, বর্ণনির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে একই চিকিৎসাব্যবস্থা। বাংলাদেশে যদি প্রতিটি জেলা, উপজেলাগুলোতে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থাকত, তাহলে বসে বসে এই চিত্র আমাদের দেখতে হতো না। প্রতিটি জেলায় যদি একটি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকত, আমাদের তাহলে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ছুটতে হতো না। ঢাকা শহরের ওপর এত চাপ পড়ত না। সুইস সরকার কোভিড-১৯–এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছেন দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোকে।

বাদ বাকি, মাঝারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো অন্যান্য রোগী এবং প্রসূতি মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কোনো প্রসূতি মাকে অনাদরে, অবহেলায় হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়নি এখানে। সুইজারল্যান্ডে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন আর তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে। কেবল আইসিইউতে ভর্তিযোগ্য রোগীদের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) থেকে সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসাব্যবস্থায় নতুন একটি দিক উন্মোচিত হচ্ছে সুইস কোভিড অ্যাপ। অ্যাপল স্টোর ও গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যাবে অ্যাপটি। সুইসের স্বাস্থ্য বিভাগ এসব তথ্য দিয়েছে। সুইস কোভিড নামে মোবাইল ফোন করোনার সব তথ্য (Android/iPhone) যথারীতি আপলোড করা যাবে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে সংক্রমণ বন্ধ করা সম্ভব হবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সুইস স্বাস্থ্য বিভাগ। সংক্রমিত ব্যক্তি এই অ্যাপসের গণ্ডি বা সীমার মধ্যে আসলেই অ্যাপসধারী একটি বার্তার মাধ্যমে জানতে পারবেন তাঁর কাছাকাছি করোনায় আক্রান্ত কেউ আছেন কি না। এ প্রশ্নের সহজ উত্তর ওই হোম পেজের পাতায় দেওয়া রয়েছে।

অ্যাপসটি ইতিমধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ব্যবহার করেছেন। এখন, দেখা যাক, এই অ্যাপস কতটুকু সুফল বয়ে আনতে পারে সুইস নাগরিকদের মধ্যে। এদিকে আবার তিন দিন ধরে সুইজারল্যান্ডের বার্ন, জুরিখ এবং বাসেলে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়েছে।
এদিকে জার্মানিতেও সংক্রমণ আবার দেখা দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে, ছোটগল্পের সংজ্ঞার মতোই মনে হচ্ছে এই কোভিড-১৯–কে, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ পৃথিবীজুড়ে দাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এই ভাইরাসমুক্ত আমরা হব না।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে কি বাংলাদেশের তুলনা করা যায়? এদের জনসংখ্যা ৮৬ লাখ, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি। কীভাবে সম্ভব? এ ক্ষেত্রে বলব, ওপরে পরিষ্কারভাবে আমি কিছুটা হলেও বলেছি। জনসংখ্যার জন্য বলব না, এখানে এসে আমি দেখেছি, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাপরায়ণ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, কাকে বলে? একটা দেশ কখন সুখী, সমৃদ্ধিশালী সোনার দেশ হয়, যখন সে দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত থাকে। নাগরিকেরাও তখন হয় সুখী, স্বাস্থ্যবান। আর স্বাস্থ্যবান, পরিশ্রমী জনগণ একটা দেশের প্রাণ।