Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা বাড়ছে কেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী অতিমারি ঘোষণার পর এক বছর হয়ে গেল। এ সময়কালে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকসহ সম্মুখসারির অনেক করোনাযোদ্ধাকে আমরা হারিয়েছি, অনেক আপনজন চলে গেছেন। অনেকে রোগে-শোকে মুমূর্ষু অবস্থায় দিন কাটিয়েছেন, এখনো অনেকে অসুস্থতায় ভুগছেন। বছর শেষে এখন বিশ্বের অনেক দেশে করোনার প্রকোপ কমেছে। আমাদের দেশেও কমেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো কয়েক দিন ধরে আবার কিছুটা বাড়ছে। কেন? আমরা তো কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে করোনা দূর হবে। আমরা আবার সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব। টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। অনেকে প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। এ সময় তো করোনার সংক্রমণ হার ধীরে ধীরে কমে আসার কথা। কিন্তু বাড়ছে। আমরা শঙ্কিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা দেওয়ার পর অনেকের মনে একটা ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে করোনার ঝুঁকি কমছে, তাই আর স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি না মানলেও চলবে। ফলে একটা ঢিলেঢালাভাব চলে আসে। আগে মাস্ক না পরলে রাস্তাঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা জরিমানা করতেন। এখন আর সেই কড়াকড়ি নেই।

দেশে আবার বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও মানছেন না বেশির ভাগ মানুষ। ঢাকা, ১১ মার্চ

রাস্তাঘাট, বাজার, শপিং মলে খুব কম মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ধুমধামের সঙ্গে চলছে। এসব অনুষ্ঠানে মাস্ক পরার চল প্রায় নেই। ফলে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা বিশেষজ্ঞদের এই অভিমত অনেকাংশে ঠিক।
তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এমন অভিমতও রয়েছে যে গরমে যেহেতু বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ে, তাই করোনার সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়। এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত কিছু ব্যাখ্যাও রয়েছে। তাই নিশ্চিতভাবে কিছু বলার সময় এখনো আসেনি। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। কারণ, বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়ার অন্তত সাত দিন পার না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না।

কিন্তু বুস্টার ডোজের পরও ঘরের বাইরে চলাফেরায় প্রত্যেকের মাস্ক পরা ও কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া একান্ত কর্তব্য। কারণ, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত হলেও ভিড়ের মধ্যে চলাফেরায় আমাদের হাঁচি-কাশি, জোরে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন। প্রশ্ন ওঠে কীভাবে এটা সম্ভব? আমি করোনামুক্ত হলে অন্যকে কীভাবে সংক্রমিত করব? এর উত্তরে বলা যায়, ভিড়ের মধ্যে বাতাসে অন্য কারও শ্বাসপ্রশ্বাসে করোনা-ড্রপলেট ঘুরে বেড়ায়। ওই সব ড্রপলেট প্রথমে আমার শ্বাসতন্ত্রে ঢোকে। কিন্তু আমি হয়তো সংক্রমিত হব না, কারণ টিকা নিয়েছি। এ অবস্থায় আমার প্রশ্বাসের সঙ্গে বের হয়ে করোনা-ড্রপলেটগুলো অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই সবাই মাস্ক না পরলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।

বুস্টার ডোজের পর

তাহলে আমরা কি বলতে পারি, সবাই করোনার বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর করোনামুক্ত হওয়া সম্ভব? কঠিন প্রশ্ন। করোনা এমন এক ভাইরাস, যা সম্পর্কে আমাদের এখনো অনেক কিছু অজানা। তবে বেশির ভাগ মানুষ টিকা নিয়ে এবং পাশাপাশি অনেকে আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে করোনা সুরক্ষা লাভ করলে দেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হতে পারে। তখন বলা যাবে আমরা নিরাপদ। তবে এটা সময়সাপেক্ষ।

Also Read: করোনার বুস্টার ডোজ কেন দরকার?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি তাঁর প্রথম প্রাইমটাইম ভাষণে বলেছেন, তিনি ১ মে–এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কোভিড-১৯ টিকা নিশ্চিত করা সব রাজ্যকে নির্দেশ দেবেন। তিনি আশা করেন, ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে সীমিত আকারে সমাবেশ করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) বলেছে, পরিবারের সদস্যরা ও পরিচিতজনেরা কোভিড-১৯ বুস্টার ডোজ নেওয়ার মাধ্যমে সুরক্ষিত হলে কিছুটা দূরত্ব রেখে একসঙ্গে বসে দেখা–সাক্ষাৎ বা প্রাণখোলা গল্পস্বল্পের আয়োজন করা নিরাপদ।

এই নিয়ম আমাদের দেশের জন্যও প্রযোজ্য। তাই আসুন, আমরা সবাই টিকা নিয়ে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করি।

প্রতীকী ছবি।

স্কুল কি খুলবে?

কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, যদি করোনা সংক্রমণের হার কেবল বাড়তেই থাকে, তাহলে স্কুল খোলার তারিখ পুনর্বিবেচনা করবে। এটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। আমরা চাই আমাদের দেশের শিশুরা নিরাপাদে থাকুক। এ বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com