Thank you for trying Sticky AMP!!

চীনে করোনাভাইরাস: একজন সাহসী চিকিৎসকের মৃত্যু

মারাত্মক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে প্রথম হুঁশিয়ারি উচ্চারণকারী চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং গত বৃহস্পতিবার হুবেই প্রদেশের উহান শহরের (যা কিনা করোনাভাইরাসের উৎসস্থল) উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে মারা গেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা লি সম্পর্কে বিশেষভাবে জানি কারণ, তিনি করোনাভাইরাসের তথ্য প্রকাশ করে চীনা কর্তৃপক্ষের ক্রোধের কারণ হয়েছিলেন। চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল রোগটি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তিনি। 

লি দেখেছিলেন, মারাত্মক সংক্রমণের লক্ষণসহ লোকজন উহানের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে, কিন্তু চীন সরকার এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করতে চাইছে না। গত ৩০ ডিসেম্বর লি তাঁর উদ্বেগের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সার্সের মতো ভাইরাস উহানে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০০২-০৩ সালে চীনে প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যা কিনা চীনা কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস ধরে গোপন রেখেছিল এবং এর ফল হিসেবে ২৬টি দেশের ৭০০-এর বেশি মানুষ তখন মারা গেছে। 

লি ওয়েনলিয়াংয়ের দেওয়া সতর্কবার্তা যে মিথ্যা ছিল না, তা তো এখন অসংখ্য আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃত্যুর ঘটনাই সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাঁর উদ্বেগ প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যে লি জানতে পারলেন, তথ্য ফাঁসকারীর মূল্য চীন কীভাবে দেয়। উহানের পুলিশ তাঁকে আটক করে এবং তাঁকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়, যে চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মন্তব্য করার’ অভিযোগ করা হয়, যা ‘সামাজিক শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে’। এটা ছিল লির প্রতি কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট হুমকি: চুপ করে থাকুন, নয়তো চীনা রাষ্ট্রের ক্রোধের মুখোমুখি হোন। 

লির নাম এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া শত শত মানুষের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। চীনে এই ভাইরাসে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লির সাহসী পদক্ষেপ ও তাঁর করুণ পরিণতি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে চীনা কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা তার নাগরিকদের মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকারকে এবং জনস্বাস্থ্য সংকটকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য চিকিৎসকদের সক্ষমতাকে কীভাবে খর্ব করছে।

অনেকে আশা করেছিলেন যে চীন সরকার সার্স মহামারির ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে এবং রাজনৈতিক সুবিধার কারণে তারা আর কখনো জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে অবহেলা করবে না। করোনাভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরও কেউ যদি এখনো মনে করেন যে চীন সার্সের ঘটনায় শিক্ষা নিয়েছে, তাহলে তা ভুল। উল্টো সার্সের পর থেকে চীন সরকার বারবার রাজনৈতিকভাবে ‘স্পর্শকাতর’ বলে বিবেচিত জনস্বাস্থ্যের যেকোনো বিষয় অস্বীকার করেছে এবং গোপন রাখার চেষ্টা করেছে।

সার্সের দুই বছর পরে হিলংজিয়াং প্রদেশের সোনহুয়া নদীতে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিক বেনজিনের ছড়িয়ে পড়ার খবর দেশীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করতে দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। পরে ব্যাপক আকারে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর চীনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় আসলে কী ঘটেছে তা জানাতে। 

২০০৮ সালে চীনের কমপক্ষে ২০টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুধের সঙ্গে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেলামিন মিশিয়ে বাজারজাত করেছিল। এ বিষাক্ত দুধ খেয়ে চীনে ছয় শিশুর মৃত্যু এবং তিন লাখের বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চীনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে সেই খবর প্রকাশ করতে দেয়নি। সেই সময় দুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া এক শিশুর বাবা সরকারের অবহেলা ও ব্যর্থতার বিষয়টি অন্যদের কাছে তুলে ধরেন। তখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে সরকার ওই ব্যক্তিকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়।

২০১১ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাকবলিত একটি ট্রেনের বিধ্বস্ত বগি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ লুকিয়ে ফেলে ওই রেল দুর্ঘটনার প্রমাণকে আক্ষরিক অর্থেই কবর দিয়েছিল। দ্রুতগতির ট্রেনের ওই দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে টিকা কেলেঙ্কারির ঘটনা চীন খুব কঠোরভাবে গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল। সে সময় হাজার হাজার শিশুকে নিম্নমানের টিকা দেওয়া হয়েছিল। 

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর খবরও কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা ছাড়াই সাদামাটাভাবে প্রচার করেছে। এতে বোঝা যায়, স্বচ্ছতা বিষয়টি চীন সরকারের অভিধানে নেই। চীন সরকারের এ ধরনের মনোভাবের যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে সেখানে ডা. লির মতো সাহসী মানুষেরা প্রশংসিত হওয়ার বদলে এভাবে শাস্তি পেতেই থাকবেন। 

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ফেলিম কিনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের সাবেক উপপরিচালক