Thank you for trying Sticky AMP!!

লাশের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নিউইয়র্কে ক্ষমতার লড়াই, সহায়তার চেক দেওয়া শুরু

করোনাভাইরাসের নাজুক সময়ে নিউইয়র্কের নানা স্থান থেকে এসব ছবি প্রথম আলোর জন্য তুলেছেন হৃদয় অনির্বাণ খন্দকার।

লাশের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নিউইয়র্কের গভর্নর ও মেয়রের রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিকেরা। নাজুক এই পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, একজন আরেকজনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছেন।

এদিকে করোনা মহামারির কারণে ওয়াইওমিংয়ে জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সব কয়টি অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে জরুরি অবস্থা জারি হলো। করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত নাগরিকেরা সরকারি নগদ অর্থ সহায়তার চেক পেতে শুরু করেছেন।

বিপর্যস্ত নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১১ এপ্রিল ৭৮৩ জনের মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ৮ হাজার ৬৫০। এ হিসাব জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের। সরকারিভাবে হাসপাতাল থেকে পাওয়া হিসাবও কাছাকাছি। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। হাসপাতালে আসার আগেই যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও গতকাল শনিবার সকালে ঘোষণা দেন, পুরো শিক্ষাবর্ষ স্কুল ভবনগুলো বন্ধ থাকবে। কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, মেয়রের ক্ষমতা নেই স্কুল বন্ধ করার, যা করার অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজ্যের গভর্নর অফিসই করবে। মেয়র গতকাল বিকেলে বলেছেন, তিনি নিজের নগরের লোকজন ছাড়া অন্য কারও কাছে দায়বদ্ধ নন।

দুজনের এই দ্বন্দ্বের রেশ টেনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট এরিখ এডামস বলেন, এসব শোনার সময় এখন নেই। নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর ও মেয়রের মধ্যে এ প্রকাশ্য বৈরিতা নাগরিকদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। দুজনই ডেমোক্র্যাট এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের বৈরিতা বেশ পুরোনো।

নগরের হাসপাতালে সংকট। জরুরি চিকিৎসার অভাবসহ নানা কারণ করোনায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট বিরাজ করছে নিউইয়র্কে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার সাধারণ সরঞ্জাম ‘সোয়াব’ সংকটের কথা জানিয়ে নগরের হাসপাতালগুলো থেকে গভর্নরের কাছে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আমেরিকায় করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগে থেকেই পদক্ষেপ না নেওয়ার তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্টকে আগাম সতর্কতা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক রবের্ট কাডলেক। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ জন থেকে ৪ হাজার ২২৬ জনে পৌঁছে। এরপরই শুরু হয় ত্রাহি অবস্থা। সর্বশেষ খবরে ৫ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষের।

তিন দিন ধরে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে অবনতি না হলেও বলা হচ্ছে, আগস্টের মধ্যে করোনায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাবে। তবে কড়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করলেই কেবল ৬০ হাজার মৃত্যুর মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হতে পারে। না হলে এই সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে নানা মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ এপ্রিল নিজের মাথায় টোকা মেরে বলেছেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তও তাঁকে নিতে হবে।

মার্কিন কর বিভাগ জানিয়েছে, শনিবারেই তারা প্রথম দফা নাগরিক সহায়তার চেক অবমুক্ত করেছে। যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য হালনাগাদ আছে, আগের ট্যাক্স রিটার্ন থেকে জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার , দম্পতির জন্য ২ হাজার ৪০০ ডলার, নির্ভরশীল প্রতি সন্তানের জন্য ৫০০ ডলার করে এই অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। যাঁরা ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেননি কোনো কারণে বা করতে হয়নি, তারাও ওয়েবসাইটে গিয়ে এখন শূন্য আয়ের বা যেকোনো আয়ের বিবরণী দাখিল করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে পারছেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে আইআরএস ডাকযোগে অর্থ পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে অর্থ প্রাপ্তিতে দেরি হবে বলেই জানানো হচ্ছে।

নিউইয়র্ক নগরীর স্কুলে নাগরিকদের খাবার দেওয়া অব্যাহত থাকলেও বহু লোক ঘরেই আটকা পড়ে আছেন। অনেকেই গিয়ে খাবার সংগ্রহে কঠিন সমস্যার মুখে পড়ছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজন যতটা পারছেন, কঠিন এ সময়ে নিজেদের নিরাপদ রেখে স্বদেশিদের সাহায্যে আগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিশ্বাসভিত্তিক সংগঠনগুলো বিপন্ন মানুষকে প্রাণান্ত সাহায্য করছে। প্রয়োজনের দাবি দিনে দিনে এতই বিরাট হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব মহলকে। ঘর থেকে ক্ষুধার্ত লোকজন সাহায্য চেয়ে পরিচিতজনকে বার্তা পাঠাচ্ছেন। চেনাজানা পরিবারে কারও মৃত্যু হলে স্বজনেরা খোঁজ নিতেও যেতে পারছেন না।

টানা চার দিন ধরে নিউইয়র্কের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমছে বলে জানিয়ে গভর্নর কুমো বলেছেন এটিকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকলে মে মাসের দিকে নিউইয়র্কের ব্যবসা-বাণিজ্য খোলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে।

কমিউনিটিকে বাঙালি চিকিৎসকের পরামর্শ নিউইয়র্কের কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক বর্ণালী হাসান নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, অনেক স্বদেশি পরিবার হাসপাতালে সময়মতো যাচ্ছেন না। তাঁর এক রোগী আগের রাতেও পেটের অসুখ নিয়ে কথা বলে চিকিৎসা চেয়েছেন। পরদিন সকালে শ্বাস কষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে যাওয়ার পরই তিনি মারা যান। ডা. বর্ণালীসহ অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের প্রবাসীদের একটি অংশ এখনো সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স কঠিনভাবে পালন করছেন না । সামান্য কিছু কেনাকাটার জন্য বাইরে যাচ্ছেন। এমনকি সভা-সমাবেশও করছেন। জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

এমন অনীহার পরিণাম ভয়াবহ উল্লেখ করে ডা. বর্ণালী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দুটি মডেলের সেলফ কোয়ারেন্টিনের পরামর্শ দিয়েছেন। এর একটি মোট ৮০ দিনের কোয়ারেন্টিন। তিন ধাপে পাঁচ দিন করে বিরতি দিয়ে। অন্যটি হচ্ছে একনাগাড়ে ৫০ দিনের কোয়ারেন্টিনে। কঠিনভাবে এই স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্নতা সবাই মেনে চললেই করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই থামবে বলে তিনি আশাবাদী।