Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, বোঝা যাবে চলতি সপ্তাহে

দেশে সপ্তাহখানেক ধরে করোনা শনাক্তের হার ওঠানামা করছে

দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার ওঠানামা করছে। এক দিন বাড়ছে, তো পরদিন খানিকটা কমছে। ধারাবাহিকতা নেই।

ভাইরাসবিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা চলতি সপ্তাহে স্পষ্ট হতে পারে। অর্থাৎ করোনার চলমান ঢেউ আরও বাড়বে, নাকি নিম্নমুখী হবে, তা চলতি সপ্তাহে বোঝা যাবে।

দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা) করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আগের দিনও করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শনাক্ত হয়েছিল ৪৪৬ জনের।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৭ দশমিক শূন্য ৪। আগের দিন হার ছিল ১০ দশমিক ১০।

দেশে এখন পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ১ হাজার ৭৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৩ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ২৬৬ জন।

পবিত্র ঈদুল আজহার পর দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। তবে শনাক্তের হার কখনোই ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামেনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

দেশে সপ্তাহখানেক ধরে করোনা শনাক্তের হার ওঠানামা করছে। যেমন ১৫ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৫। এদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫১। পরদিন শনাক্তের হার হঠাৎ বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৭০। এদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকতা নেই। কমা-বাড়ার ঘটনা ঘটছে। অবস্থা কোন দিকে যাবে, তার জন্য চলতি সপ্তাহের সংক্রমণ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।

ঈদযাত্রার শুরুর দিকে দেশে করোনা শনাক্তের উচ্চহার ছিল। ৫ জুলাই ঈদযাত্রা শুরুর প্রথম দিকে শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮৯। তখন জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি ঈদের পর আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যায়। তারা ঠাসাঠাসি করে ট্রেনে-বাসে চেপে গ্রামে যায়। এ কারণে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু মানুষ গ্রামে গিয়ে একটা খোলামেলা পরিবেশ পায়। ফলে, তা হয়তো সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করেছে। তাই বলে আশঙ্কাটা এখনো কাটেনি।’

কেন আশঙ্কা কাটেনি, এর ব্যাখ্যায় এ এস এম আলমগীর বলেন, ঈদযাত্রা শুরুর পর ১৪ দিন পার হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড (সুপ্তিকাল—ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর থেকে তা প্রকাশের সময়) পার হয়েছে। তাই চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত যদি শনাক্তের হার কমতে থাকে, তাহলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু উল্টোটা হলে শনাক্ত আবার বাড়বে।

শনাক্তের সংখ্যা ও হার ঈদের আগের অবস্থায় যাবে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমদ। তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও চলতি সপ্তাহটা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম থেকে মানুষ আবার ঢাকায় ফিরে এসেছে। চলতি সপ্তাহে যদি করোনার বিস্তার বেশি না হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যাবে, সংক্রমণের গতি পড়তির দিকে।

এ ক্ষেত্রে একটি বিচার্য বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যদি ভাইরাসের নতুন কোনো মিউটেশন বা রূপান্তর না ঘটে, তবে আমরা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথে আছি বলে ধরে নেওয়া যাবে। কিন্তু যদি নতুন কোনো রূপান্তর ঘটে, তবে পরিস্থিতি আবার নাজুক হতে পারে।’

করোনার গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য গবেষক-জনস্বাস্থ্যবিদেরা চলতি সপ্তাহকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন, তেমনি তাঁরা কিছু করণীয় তুলে ধরছেন। তার মধ্যে প্রধান করণীয় হলো, যাঁরা এখনো টিকা নেননি, তাঁদের দ্রুত তা নিয়ে নেওয়া। যাঁরা এক ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া। এ ছাড়া যাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের বুস্টার ডোজ নিয়ে নেওয়া।

এ এস এম আলমগীর বলেন, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন না করলে করোনার টিকার কার্যকারিতা থাকে না। এটা অবশ্যই সবাইকে বুঝতে হবে। অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। আবার যাঁদের বুস্টার ডোজ নেওয়া হয়নি, তাঁদের তা নিয়ে নেওয়া উচিত।

এখনো যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের একটি তালিকা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক বে-নজির। তিনি বলেন, টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা করে এক সপ্তাহের মধ্যে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। তালিকা ধরে এসব ব্যক্তিকে কাছের কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা করা যায়। তা করা গেলে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।