Thank you for trying Sticky AMP!!

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

লাশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় শিলা বেগম (২০) নামের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার উপজেলার পশ্চিম তালশহর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। শিলার পরিবারের অভিযোগ, হত্যার পর স্বামী তাঁর লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছেন। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে শিলা বেগমের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

শিলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পোতাই গ্রামের বাবুল মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামীর নাম খায়রুল মিয়া। স্বামী পেশায় অটোরিকশাচালক।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাত মাস আগে শিলার সঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলার খায়রুল মিয়ার বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রায়ই তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হতো। গত সোমবার দুপুরে স্বামীর বাড়ির একটি কক্ষে দড়ির সঙ্গে শিলার লাশ ঝুলতে দেখা যায়। পরে বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শ্রীবাস চন্দ্র দাস। প্রতিবেদনে তিনি শিলার গলায় অর্ধচন্দ্রাকার কালো জখমের কথা উল্লেখ করেছেন।

নিহত শিলার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বোনের বাঁ পায়ের তালুতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু সুরতহাল প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। বোনের শ্বশুরবাড়ির সামনেই আমার একটি মুদির দোকান রয়েছে। গতকাল দুপুরে বোনের শ্বশুর কাইয়ুম মিয়া দোকানে এলেও মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে জানাননি। তিনি দোকান থেকে চলে যাওয়ার পরপরই বাবার কাছ থেকে বোনের মৃত্যুর সংবাদ পাই।’ তাঁর অভিযোগ, বোনকে টাকার জন্য নির্যাতন করে তাঁর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন।

ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক এ বি এম মুছা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিহত গৃহবধূ পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

শিলার বাবা বাবুল মিয়া অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের সময় মেয়ের স্বামীকে ৩০ হাজার টাকা নগদ দিয়েছি। ঘরের আসবাবও চেয়েছিল। কিন্তু দিতে পারিনি। কয়েক দিন আগে গাড়ি কিনতে এক লাখ টাকা বাড়ি থেকে এনে দিতে মেয়েকে চাপ দেয় খায়রুল। টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে প্রায়ই মারধর করত। চার-পাঁচ দিন আগে মেয়ের সঙ্গে সবশেষ কথা হয়। সে সময় শিলা এক লাখ টাকা জোগাড় করে স্বামীকে দিতে বলেছিল।’


বাবুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, যৌতুকের টাকার জন্যই মেয়েকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন হত্যা করেছেন। এখন তাঁরা এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছেন। আর থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ তা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা বলতে নিহত গৃহবধূর স্বামী খায়রুল মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছেন আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার সব আলামত নিহত শিলার শরীরে পাওয়া গেছে। তবে নিহত শিলার বাবার বাড়ির লোকজন এটিকে হত্যা বলে দাবি করছেন বলে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা পরিষ্কার হবে। এ ঘটনায় আপাতত একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।